জামিন পেলে বিদেশ যাবেন খালেদা: এমপি হারুন

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2019, 01:29 PM
Updated : 2 Oct 2019, 12:44 PM

কারা হেফাজতে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে থাকা দলীয় নেত্রীকে মঙ্গলবার দেখে আসার পর একথা জানান তিনি।

বিএনপির আরও দুই সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ও আমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বিকালে দলীয় নেত্রীকে দেখতে যান হারুন।

প্রায় এক ঘণ্টা দলীয় প্রধানের সঙ্গে থাকার পর বেরিয়ে হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “উনার (খালেদা জিয়া) যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ রয়েছে, এগুলোর জন্য উনার অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দরকার। এটার জন্য বিদেশে তার চিকিৎসার দরকার।

“আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, বাস্তবিকই উনার জামিন পাওয়ার যে নৈতিক অধিকার, এই জামিনের অধিকার থেকে তাকে যেন বঞ্চিত করা না হয়।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে দুটি মামলায় (জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) জামিন পেলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন বলে তার আইনজীবীদের ভাষ্য।  

এ দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আবেদন আপিল বিভাগে এবং দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া ৭ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল হাই কোর্টে বিচারাধীন।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকারই আদালতকে প্রভাবিত করে খালেদার জামিন আটকে রেখেছে।

জামিন পেলে বিএনপি চেয়ারপারসন কি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চান- প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, “উনি চিকিৎসার সুযোগ পেলে তো অবশ্যই বিদেশ যাবেন। উনি আজকে জামিন পেলে কালকেই বিদেশ যাবেন।”

“উনি যদি আজকে জামিন পান, প্রথম অগ্রাধিকার হবে উনার চিকিৎসা,” বলেন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।

চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে রয়েছেন ৭৫ বছর বয়সী খালেদা। বিএনপি তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইলেও তাতে সরকারের সায় মেলেনি।

হারুন বলেন, “তার শারীরিক কনডিশন যেরকম, তার চিকিৎসা বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেই। আজকে ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) অসুস্থ হয়েছেন, তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজকে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন এই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা সারাদেশের মানুষ জানতে চায়।”

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত ২৭ জুলাই বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লক থেকে দন্ত বিভাগে নেওয়া হয়েছিল চিকিৎসার জন্য (ফাইল ছবি)

খালেদার বিদেশ যাওয়া নিয়ে নানা খবর বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।

প্যারোলে মুক্তি নিয়ে খালেদা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বলে একটি সংবাদপত্র কিছু দিন আগে খবর প্রকাশ করায় অসন্তোষ জানিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, কোনো শর্তে মুক্তি নেবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন।

সরকারের তরফ থেকে প্যারেলের কোনো প্রস্তাব আছে কি না- প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, “না। এই ধরনের কোনো প্রস্তাবনা নেই। প্যারোলের বিষয়টা আসবে কেন? উনি তো জামিন পাওয়ার যোগ্য।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর দলের মধ্যে মতভেদ রেখেই সংসদে যোগ দেন হারুনসহ বিএনপির ছয়জন সংসদ সদস্য।

সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়েছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না। আমরা সংসদে যোগদান করার পরে আমরা যে ক‘জন কথা বলার চেষ্টা করেছি, তার মধ্যে মাননীয় নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি অন্যতম ছিল।

“আমি দলনেতা হিসেবে ইতোমধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দুই-এক জায়গায় কথাও বলেছি, তার মুক্তির দাবি জানিয়েছি। এই ব্যাপারে উনারা ‘দেখা যাক-এটা আইনি ব্যাপার’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

“আমি বার বার বলেছি, আজকেও দেশবাসীর উদ্দেশে জানাচ্ছি, উনার জামিনের যে অধিকার, সেই অধিকার থেকে উনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যত দ্রুত সরকার জামিন দেবে, সেটা আইনের শাসনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

অশ্রুনয়নে অবস্থা বর্ণনা

কারাবন্দি দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন হারুন; এসময় তার সঙ্গী অন্য দুই সংসদ সদস্যের চোখেও ছিল জল।

খালেদা জিয়ার জন্য ফুলের তোড়া ও একঝুড়ি ফল নিয়ে যান তারা। বিকাল সাড়ে ৪টায় বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ছয় তলায় তারা যান। সেখানে খালেদা জিয়ার কেবিনে এক ঘণ্টা ছিলেন তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “খুব বেদনাদায়ক, খুবই পীড়াদায়ক এবং কষ্টদায়ক- এটি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

“উনি চরম অসুস্থ এবং উনার হাত দিয়ে নিজের খাওয়াটাও নিজে খেতে পারে না, নিজের কাপড় নিজে পরতে পারেন না। উনি হাত সোজা করতে পারেন না, উনার হাত কাঁপে। এই অবস্থার উনাকে বন্দি রাখা, এটা কত বড় অমানবিক!”

বিএসএমএমইউতে মঙ্গলবার খালেদা জিয়াকে দেখতে যান হারুনুর রশীদসহ বিএনপির তিন সংসদ সদস্য

হারুন বলেন, “আমি বলব যে, এটা তার প্রতি একটা জুলুম হচ্ছে। আজকে এই জুলুম থেকে তাকে যেন আল্লাহ পাক মুক্ত করেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

“বাংলাদেশে তথাকথিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে, ক্যাসিনোয় অভিযানের মধ্য দিয়ে যে চিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, আজকে আমাদের সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে সামান্য ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জামিন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। এটি কত বড় অন্যায় জুলুম!”

খালেদা জিয়া কিছু বলেছেন কি না- জানতে চাইলে হারুন বলেন, “উনি শুধু দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমাদের চোখে আমরা পানি ধরে রাখতে পারি নাই।”

সাংগঠনিক বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “উনি সংগঠনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। যেহেতু উনার শারীরিক যে অবস্থা .... উনাকে আমরা বলেছি যে, গত এক মাসে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশগুলো হয়েছে সরকারের বাধা-বিপত্তির পরেও। লক্ষ লক্ষ লোক ওইসব সমাবেশে যোগদান করেছে।

“উনি শুধু বললেন, ‘তোমরা সবাইকে নিয়ে দেখে-শুনে এক সাথে থাক, দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসলে মানুষ যেন মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে, তাদের ভোটাধিকার ফিরে পায়, সেজন্য কাজ কর’।”