জি কে শামীম কোনো কালে যুবলীগের কেউ না: ওমর ফারুক

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের সঙ্গে যুবলীগের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2019, 03:05 PM
Updated : 20 Sept 2019, 03:11 PM

ঢাকায় চাঁদাবাজি-অস্ত্রবাজি ও জুয়াবিরোধী অভিযানের মধ্যে শুক্রবার গুলশানের নিকেতনে জি কে শামীমের অফিসে যান র‌্যাব সদস্যরা। যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা শামীমের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

তার অফিসে কয়েক ঘণ্টার অভিযান শেষে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে দুইশ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। সাত দেহরক্ষীসহ শামীমকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জি কে শামীম যুবলীগের সমবায় সম্পাদক বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

বিকালে উত্তরা-আজমপুরে সংগঠনের এক কর্মসূচিতে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, “জি কে শামীম কোনো কালে, কোনো সময়ে, কোনো দিন যুবলীগের কেউ ছিল না।”

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, “কে এই জিকে শামীম? যুবলীগের কোনো পদে সে আছে? আমি যুবলীগের চেয়ারম্যান আমি তো তাকে নেতা বানাইনি। যুবলীগের কমিটির কোথাও তো তার নাম নেই। তাহলে আপনারা কেন বলছেন জিকে শামীম যুবলীগের নেতা?

“আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, জি কে শামীম অথবা গোলাম কিবরিয়া শামীম নামে যুবলীগের কোনো নেতা নেই।”

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত জি কে শামীম। গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারি কাজে তার দাপটের খবর ইতোমধ্যে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।

যুবলীগে শামীমের কোনো পদ না থাকলেও তিনি নিজেকে সংগঠনের সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে জানান যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু।

বিষয়টি নিয়ে যুবলীগ নেতাদের মধ্যে কয়েকবার আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জি কে শামীম এক সময় যুবদলের সহ-সম্পাদক ছিল। এখন সে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বলে শুনেছি।”

যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা জি কে শামীমের নিকেতনের অফিসে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। ছবি:আব্দুল্লাহ আল মমীন

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামের মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম থাকেন বনানীর ডিওএইচএসে। আর নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনটি তিনি তার জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন।

জি কে শামীম নামে নারায়ণঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে কোনো সহ-সভাপতি বা সদস্য নেই বলে জানিয়েছেন নারায়ণঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই।

আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলছেন, আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতেই জি কে শামীম নেই।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ জেলা বা মহানগর আওয়ামী লীগের তালিকায় জি কে শামীম নামের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই।”

২০১৭ সালের ১০ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির অনুমোদন হয় জানিয়ে ওই কমিটির একটি অনুলিপি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন বিপ্লব। 

তিনি বলেন, “এখানে জি কে শামীম নামের কোনো ব্যক্তির নাম নেই। আওয়ামী লীগের সাথে তার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।”

আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বলেন, জি কে শামীমকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, যা ‘অসত্য ও বিভ্রান্তিকর’।

এ ধরনের খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনায় বিনীতভাবে বলতে চাই, দেশের সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কোনো তথ্য প্রকাশের পূর্বে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্যটি যাচাই করুন এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করুন।”

চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলতে থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, “আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সর্বপ্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন। দেশে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করে শুদ্ধ রাজনীতির ধারাকে স্থায়ী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী জনগণের অভিপ্রায়ে দুর্নীতির এবং দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির বিরুদ্ধেও নির্মোহভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

“সেই প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের বেআইনি ও অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে।”

যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা জি কে শামীমের নিকেতনের অফিসে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, অস্ত্র ও মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। ছবি:আব্দুল্লাহ আল মমীন

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “আমরা মনে করি, অপরাধী অপরাধীই- সে যে দলেরই হোক না কেন। কেউ যদি দেশের প্রচলিত আইনের কোনো প্রকার ব্যতয় ঘটায় এবং দেশের প্রচলিত আইন যদি কেউ ভঙ্গ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অন্যজনের নিরাপত্তাহানি করে তাহলে তখন একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ হচ্ছে জনশৃঙ্খলা এবং জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

“বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছিল তার সবচেয়ে বড় ভিকটিম আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার। সেজন্য আমরা চাই না যে, বিচারহীনতার কারণে অথবা আইনের শাসনের অভাবে দেশের কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হোক।”