ছাত্রদলের নেতা বাছাইয়ে মির্জা আব্বাসের বাড়িতে ভোটগ্রহণ

ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2019, 01:46 PM
Updated : 18 Sept 2019, 09:25 PM

বুধবার বিকালে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের ডাকা হয়েছিল, সন্ধ্যার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শাহজাহানপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাড়িতে।

সেখানেই স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে রাতে কাউন্সিলররা নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে ভোটগ্রহণ হয়।

ছাত্রদলের ১১৭টি শাখার ৫৩৪ জন নেতার ভোটে ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন বলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “রাত ৮টায় ভোট শুরু হবে। রাত ৮টার পর আর কাউকে (ভেতরে) ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

মির্জা আব্বাসের বাড়ির প্রধান ফটকে কাউন্সিলর ও প্রার্থীদের কার্ড দেখে ঢোকানোর পর ভোটগ্রহণ শুরু করতে পৌনে ৯টা বেজে যায়।

ছাত্রদলের শীর্ষনেতা নির্বাচনে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম ভোট হচ্ছে। ওই কাউন্সিলে রুহুল কবির রিজভী সভাপতি এবং এম ইলিয়াস আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে কয়েক মাস পরই কমিটিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

ভোটগ্রহণ শুরুর পর ছাত্রদলের এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, “নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের কাজটি শুরু করেছি।”

ভোটগ্রহণ বিরতি ছাড়াই চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভোটের পর আমরা দ্রুতই গণনার কাজ শুরু করে ফলাফলও ঘোষণা করব।”

রাত পৌনে ১টার দিকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা জানান নির্বাচন পরিচালনাকারীরা। তারা জানান, ৪৮১ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়েছেন।

ছাত্রদলের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন নয়জন, সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ১৯ জন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর এই কাউন্সিল অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হলেও ছাত্রদলের এক নেতার আবেদনে ঢাকার একটি আদালত এই কাউন্সিলে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় তা হয়নি।  

সরকারের হস্তক্ষেপে আদালত এই স্থগিতাদেশ দিয়েছে অভিযোগের পর বিএনপি নেতারা বলেছিলেন আইনি প্রক্রিয়া মোকাবেলা করেই সহযোগী সংগঠনটির এই কাউন্সিল করবেন তারা।

বিএনপি নেতারা এখন বলছেন, আইনজীবীরা মত দিয়েছেন যে কাউন্সিল করায় আইনগত কোনো বাধা নেই।

এর পরপরই বুধবার বিকালে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের ডাকে এই কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

তখন রিজভী বলেছিলেন, “বিকাল ৫টায় সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে জনাব তারেক রহমানের (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) বৈঠক আছে। সেজন্য নেতাদের থাকতে বলা হয়েছে।”

নয়া পল্টনে ছাত্রদলের প্রার্থী ও সমর্থকরা

ছাত্রদলের একাধিক সাবেক নেতা জানিয়েছিলেন, রাতের যে কোনো সময়ে ভোটগ্রহণ হতে পারে।

নয়া পল্টনের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করেন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান। তখন তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে প্রার্থীরা বসেছিলেন।

এরপর সন্ধ্যায় প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের মির্জা আব্বাসের বাড়িতে যেতে বলা হয়।

তখন জানতে চাইলে রিজভী বলেন, “সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটগ্রহণ হবে।”

ছাত্রদলের কাউন্সিলে নির্বাচন পরিচালনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন।

তার সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক দুই সভাপতি এ্যানি ও আজিজুল বারী হেলাল। সাবেক ছাত্রদল নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন।

ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সভাপতি পদের প্রার্থীরা হলেন- ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, মামুন বিল্লাহ(মামুন খান), সাজিদ হাসান বাবু, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো এরশাদ খান, মাহমুদুল আলম সরদার ও কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা হলেন- মো. শাহনেওয়াজ, আমিনুর রহমান আমিন, জাকিরুল ইসলাম জাকির, তানজিল হাসান, কারিমুল হাই নাঈম, মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, শেখ আবু তাহের, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন শ্যামল, জুয়েল হাওলাদার, মুন্সি আনিসুর রহমান, মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মসিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা ও কাজী মাজহারুল ইসলাম।

ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান।

শুরুতে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন পর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিল।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এবার বয়সের শর্ত যোগ করা হলে তা নিয়ে সংগঠনটির একাংশ প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নেমেছিল। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ভাংচুর চালানো হয়। তখন কয়েকজনকে বহিষ্কারও করা হয় ছাত্রদল থেকে। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।