শোভন-রাব্বানীর পদচ্যুতিতে ‘আইনের লংঘন’ দেখছেন রিজভী

আওয়ামী লীগের বৈঠক থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে শোভন ও রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইনের লংঘন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2019, 03:07 PM
Updated : 17 Sept 2019, 03:11 PM

এই অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ভ্রাতৃপ্রতীম’ সংগঠন হওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে কোনো আদেশ-নির্দেশ দেওয়া বা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। তাদের জায়গায় সংগঠনটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়।

এরপর থেকে শোভন-রাব্বানীর জায়গায় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জয় ও লেখক।

চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব হারালেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী

মঙ্গলবার বিকালে নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের বিষয় নিয়ে কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ধারা লংঘন করেছে। এখন আদালত বা নির্বাচন কমিশন চুপ কেন? এখন কেন অন্ধ সেজে চোখ বন্ধ করে আছেন?”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ছাত্র লীগ ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের সহযোগী থাকলেও নতুন আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আরপিও অনুযায়ী ছাত্রলীগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৪ (১) ধারা অনুযায়ী ছাত্রলীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন মাত্র।

“এদিক থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে কোনো আদেশ-নির্দেশ দেওয়া বা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তারা কেবল পরামর্শ দেওয়ার অধিকার রাখে।

“কিন্তু বাস্তবে আপনারা কী দেখতে পাচ্ছেন? গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আইন-কানুন লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করেছেন। এতে সুস্পস্টভাবে প্রমাণিত হয়, নিয়ম- নীতি, বিধি-বিধান, আইন-কানুন সব লংঘন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন।”

এখন কেউ এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেলে ছাত্রদলের কাউন্সিলে যেমন স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনি ‘আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের’ উপর একই রকম স্থগিতাদেশ দিতে পারবে কি না সে প্রশ্ন করেন রিজভী।

ছাত্র দলের কাউন্সিলের সব কার্য্ক্রমই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়েছে বলে দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, বিএনপি তার গঠনতন্ত্রে ছাত্রদলকে অঙ্গসংগঠন থেকে সহযোগী সংগঠন করেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে এবং বলা হয়েছে যে, তারা তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে।

“ছাত্র দলের গঠনতন্ত্রে যে বিধানগুলো আছে সেই বিধান অনুযায়ী ছাত্র দলে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সংগঠনটির বিধানেই আছে। কোনো ব্যত্যয় হয় নাই। এখানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন এগুলো ছাত্র দলের বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে রয়েছে।”

কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে ছাত্র দলের কাউন্সিলের ওপর ঢাকার চতুর্থ আদালতের স্থগিতাদেশ জারির পেছনে ‘সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হাত' রয়েছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।