তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো গোলাম রাব্বানী ‘অনুতপ্ত’ হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চাইলেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
কমিটি গঠনে চাঁদাবাজির কয়েকটি ঘটনার পর সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ তোলেন।
এতে ছাত্রলীগের ‘সাংগঠনিক নেত্রী’ শেখ হাসিনা গত শনিবার দলের এক সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার নির্দেশে ওই দিনই পদত্যাগ করেন শোভন ও রাব্বানী; যাদের কমিটির মেয়াদের অর্ধেকই এখনও বাকি।
ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে ডাকসুর এবারের নির্বাচনে ভিপি পদে প্রার্থী হয়ে হারলেও নির্বাচিত ডাকসুর মনোনয়নে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হয়েছিলেন শোভন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর জিএস হন রাব্বানী।
‘দুর্নীতির কারণে’ ছাত্রলীগের পদ খোয়ানোর পর ডাকসু থেকে রাব্বানী এবং সিনেট থেকে শোভনের পদত্যাগের দাবি তোলে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।
এই পরিস্থিতিতে সিনেট থেকে অব্যাহতি চেয়ে সোমবার বিকালে শোভন পদত্যাগপত্র পাঠান বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়েকজন ছাত্র বিকেলে আমার কাছে শোভনের পক্ষ থেকে সিনেট থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আমরা এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”
ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিব ও ডাকসুর সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজসহ কয়েকজন উপাচার্যের কাছে শোভনের পদত্যাগপত্রটি নিয়ে যান।
তবে ছাত্রলীগ সভাপতির পদ হারানোর সঙ্গে সিনেট থেকে অব্যাহতি চাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন শোভন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানামুখী আলোচনার প্রেক্ষাপটে বিতর্ক এড়াতে তার এই সিদ্ধান্ত।
কুড়িগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতার সন্তান শোভন বলেন, “পদ-পদবী তো কোনো বিষয় না। মানুষের জীবনের ন্যায়বোধ, মূল্যবোধ সবকিছু।”
এদিকে অতীতের ভুলত্রুটির জন্য শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে সোমবার সকালে নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন রাব্বানী।
তিনি লেখেন, “মমতাময়ী নেত্রী, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি, আমি অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী। প্রিয় অগ্রজ ও অনুজ, আপনাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির পুরো মেলবন্ধন ঘটাতে পারিনি বলে আপনাদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী।
“প্রাণপ্রিয় আপা, আপনি আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুযোগ্য তনয়া, ১৮ কোটি মানুষের আশার বাতিঘর। আপনার দিগন্ত বিস্তৃত স্নেহের আঁচল, এক কোণে যেন ঠাঁই পাই। আপনার ক্ষমা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন চলতে চাই।”
একইসঙ্গে রাব্বানী লেখেন, “মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমিও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থি 'গর্হিত কোন অপরাধ' করিনি।
“আনীত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।”
যে অভিযোগে রাব্বানী ছাত্রলীগের পদ হারিয়েছেন, সেই কারণে ডাকসুর জিএস পদে তার থাকাটা নৈতিকতার পরিপন্থি বলে মনে করেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর।
তবে রাব্বানী ডাকসুর পদ ছাড়বেন না বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুসরণ করবেন বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।
এদিকে রাব্বানী স্ট্যাটাস দেওয়ার পর ১৩ ঘণ্টায় মধ্যে ৬ হাজার মন্তব্য আসে, যাতে অনেকে তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
রাব্বানীর ভাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত গোলাম রুহানী লিখেছেন, “ভুল শুধরে তোমরা ফিরে আসবে স্বমহিমায় ইনশাআল্লাহ।”
নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা লিখেছেন, “শুভ কামনা ও দোয়া রইল.. ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর নামই জীবন। তুমি পারবে বলেই আমরা ও আমাদের সকলের বিশ্বাস। কিছু হয়নি। এগিয়ে যাও সততা ও নিষ্ঠাকে সামনে রেখে।”
আরও খবর