দেশে ‘গণতন্ত্রহীনতা’ বৈশ্বিক পরিবর্তনের অংশ: ফখরুল

বাংলাদেশ ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থায় রয়েছে দাবি করে একে বৈশ্বিক প্রবণতার ধারাবাহিকতা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2019, 05:13 PM
Updated : 16 Sept 2019, 05:13 PM

সোমবার ঢাকার তোপখানা রোডে শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস ও আমরা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রহীনতা,  এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামগ্রিকভাবে গোটা বিশ্বে পলিটিকাল চেঞ্জ যেগুলো ঘটছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে গেছে।

“আজকের সরকার ওই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির সঙ্গে যোগসাজশ করে বাংলাদেশের জনগণের অধিকারকে হরণ করে নিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারা সম্পূর্ণভাবে পাপেট সরকারে পরিণত হয়েছে। যারা আজকে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ক্রীড়ানক হয়ে এই সরকার ক্ষমতায় আছে।”

তিনি বলেন, “যে কারণে আমরা দেখি যখন রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেই সমস্যার সমাধান বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক ম্যানুভারিং করতে পারে না।

“আমরা যখন দেখি, আসামে প্রায় ১৯ লাখ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করে বলা হয় তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে এসেছে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, তখন এই নতজানু সরকারকে কোনো প্রতিবাদ করতে আমরা দেখি না।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এই সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এখানে বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় দেখতে পারছেন না। সক্রিয় কোন দিক দিয়ে না?

“আমরা আমাদের কাজগুলো করছি, আমরা দল ও সংগঠনকে সংগঠিত করে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে নেমে আসার জন্য কাজ করছি।”

ঐক্যফ্রন্টের  ‘ঐক্য এখনও অটুট আছে’ বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাকে যদি মুক্ত করতে হয়, সুচিকিৎসার জন্য যদি বাইরে আনতে হয়, তাহলেও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বের করে নিয়ে আসতে হবে।”

‘ছোটখাটো’ পার্থক্য ভুলে সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করে এই স্বৈরাচার হটানো যাবে না। পুরো জাতির গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক, বামপন্থি শক্তি সকলে মিলে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে এদের বিদায় করতে হবে।”

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমরাই সাহসী, আমরা দশ বছর লড়ছি। আমরা আছি; শেষ পর্যন্ত আমরা লড়ব। কোনো বিভ্রান্তিতে আমাদের পড়া ঠিক হবে না।”

সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে  ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ধরে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, “গতকালকে একটা টক শোতে গেছি; গত কয়েকদিন ধরে এই যে, ছাত্রলীগের বিরাট অর্জন, এটা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে এবং উনারা আমাদেরকে দিয়ে বলাবার চেষ্টা করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে এর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন এটাকে অন্তত প্রশংসা করেন। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকে দায়িত্ব থেকে বের করে দিয়েছেন, এটাকে ভালো বলবেন না?”

“আরে এটা যদি ভালোই হত, এটা যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বার্তাই হত তাহলে হল-মার্কের কেলেংকারির পরে আপনার উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি কেন? এটা যদি সত্যিই হত, আপনি জনগণকে বার্তা দিতে চান যে আপনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই শুরু করতে চান, তাহলে বাংলাদেশের সব কয়টা ব্যাংক যে একের পর এক খালি হয়ে যাচ্ছে-এই ব্যাংকের পতনের জন্যে যারা যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কিছু করেছেন আজ পর্যন্ত? কিছুই করেননি।”

নাগরিক ঐক্যের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম, মোমিনুল ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।