এরশাদের আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিল আওয়ামী লীগ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের আসন রংপুর-৩ এ প্রার্থী দিয়েও শেষ পর্যন্ত রাখল না আওয়ামী লীগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2019, 10:48 AM
Updated : 16 Sept 2019, 11:32 AM

দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বিরোধিতার মধ্যেই নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে বলেছেন, দলের স্বার্থে নিজেকে ‘বিসর্জন’ দিলেন তিনি।

সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সাহতাব উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রংপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু নিজে এসে আমার কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন জমা দিয়েছেন। বৈধ প্রার্থী ছিলেন তিনি।”

ফলে এই আসনে এখন মহাজোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে শুধু জাতীয় পার্টির রাহগির আল মাহিই (সাদ এরশাদ) প্রার্থী থাকছেন।

টিকে থাকা প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। মূল লড়াইয়ে আর ক’জন রয়েছে, তা পরে জানানো হবে।”

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য আসনটিতে উপনির্বাচনে রাজু ও সাদ ছাড়াও বৈধ প্রার্থী ছিলেন বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর বিকাল সাড়ে ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা রাজু।

তিনি বলেন, “জাতীয় স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি নিজেকে বিসর্জন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলাম। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মনোনয়নপত্র নিয়েছিলাম, আবার উনারই নির্দেশে প্রত্যাহার করলাম।”

এরশাদের পৈত্রিক এলাকা রংপুরে গত তিনটি নির্বাচনে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর পর নৌকার প্রার্থী রাখতে প্রবল চাপ ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে রাজু রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাওয়ার সময় রংপুর শহরের জিরো পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে এমন বাধা পান আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু

রাজু উপস্থিত হলে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করতে রাজুকে চাপ দেয়। পরে তাদেরকে শান্ত করতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা জানান রাজু। তাদের শান্ত করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেন তিনি।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিউর রহমান শফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল প্রমুখ।

এরশাদের মৃত্যুর পর অগোছালো জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে রংপুরের আসনটি ছেড়ে দিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছিল।

আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত সোমবার দুপুরেও দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, “আমরা মাঠের অবস্থা বিবেচনা করছি। অবশ্য জাতীয় পার্টিকে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের বিবেচনা আছে।”

গত ১৪ জুলাই রংপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ১ সেপ্টেম্বর আসনটিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর। ৫ অক্টোবর হবে ভোটগ্রহণ।

রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ১-৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন। এই আসনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৩০টি, ভোটকক্ষ ৯১০টি।