রাজনীতিকদের মুখে মুজাফফর আহমদের গুণগান

অধ্যাপক মুজাফফর আহমদের স্মরণ সভায় অংশ নিয়ে প্রয়াত ন্যাপ সভাপতির গুণগান করলেন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2019, 08:03 PM
Updated : 14 Sept 2019, 08:03 PM

অধ্যাপক মুজাফফরকে ‘কিংবদন্তিতুল্য রাজনীতিক’ অভিহিত করে তার স্মৃতি রক্ষায় একটি জাতীয় স্থাপনা নির্মাণের দাবি করেছেন তারা।

শনিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই স্মরণ সভা হয়। গত ২৩ অগাস্ট অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।

স্মরণ সভার শুরুতে প্রয়াত মোজাফফর আহমদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। পরে তার স্মৃতির উদ্দেশে দুটি রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, সেখানে সাধারণ মানুষের সকল মৌলিক অধিকার সুরক্ষা পাবে। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।”

জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন গণমানুষের নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। যিনি সমাজতন্ত্রকে লালন ও চর্চা করে গেছেন নিরন্তরভাবে। আমার শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লা হওয়ার কারনে আমাকে জামাই বলে ডাকতেন।

“আমরা বামপন্থিরা রাজনৈতিক কৌশলের নামে অবস্থান পরিবর্তন করেছি, আদর্শকে ত্যাগ করেছি, মন্ত্রী হয়েছি, এমপি হয়েছি কিন্তু মোজাফফর আহমদ এসব থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থান করেছেন। একটা ক্ষোভ নিয়ে মনে কষ্ট নিয়ে উনি চলে গেছেন। আমাকে একবার উনি বললেন, দেশ স্বাধীন করলাম আমরা সবাই মিলে আর সরকার গঠন করলা শুধু তোমরা। আমি জানি না এই দুঃখ নিয়ে হয়ত উনি চলে গিয়েছেন।”

রব বলেন, “কত বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ যখন রাষ্ট্রীয় পদকের জন্য লালায়িত তখন স্বাধীনতা পদক গ্রহণে মোজাফফর আহমদের অসম্মতি রাজনীতিবিদের মর্যাদা ও উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

“সমাজ থেকে যখন সত্য বিদায় নিচ্ছে, লজ্জার মৃত্যু হচ্ছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন যখন নির্বাসনে যাচ্ছে তখন ভীষণ প্রয়োজন ছিল অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মতো একজন রাজনীতিবিদের।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “একজন আর্দশবান সৎ নীতিবান রাজনীতিবিদ ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তিনি কখনো সামাজ্যবাদীদের সাথে আপস করেননি, সমাজতন্ত্রের প্রশ্নেও আপস করেননি। ইতিহাসের পাতায় তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে আমি নিজে দেখেছি, প্রায়শই তিনি দেখা করতে আসতেন বঙ্গবন্ধুর সাথে। অত্যন্ত আন্তরিক সম্পর্ক ছিল তাদের মধ্যে। তারা একে অপরকে তুমি বলে সম্বোধন করে কথা বলতেন।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জীবনী আমরা অনেকে বিস্তৃতভাবে জানি না। এটা সকলের জানা উচিত। উনি যেসব কথা বলে গেছেন, যেসব লেখা লিখে গেছেন সেসব সংকলিত করার একটা উদ্যোগ নেওয়া হোক, একটা বই হিসেবে প্রকাশ করা হোক।

“অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একজন কিংবদন্তিতুল্য রাজনীতিবিদ ছিলেন।”

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “আমি যেভাবে উনাকে দেখেছি, জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বাকগুলোতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে উনি পিছপা হননি। এমনও দেখা গেছে, জাতীয় রাজনীতির জাতীয় স্বার্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ বাকে উনি যদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকেন, অন্য কেউ যদি নিয়ে থাকেন তাকে উনি সমর্থন করেছেন। যেমন ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধু যখন ৬ দফা দিলেন অনেকজন অনেক কথা বলেছেন, উনি কিন্তু সমর্থন দিয়েছেন।

“একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সংগ্রাম শুরু হয়েছে এবং চলছে তখন উনি দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, উনি ঐক্যের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন।”

“উনি আজীবন আমৃত্যু সমাজতন্ত্রের জন্য অবিচল ছিলেন। আমি জাতীয় নেতার নামে জাতীয় স্থাপনা প্রতিষ্ঠার আবেদন করছি। আশা করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি জাতীয় স্থাপনা তার নামে নামকরণ করবেন।”

প্রয়াত নেতার স্ত্রী ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী আমেনা আহমদের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় ঐক্য ন্যাপের পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু, খালিদ হাসান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণআজাদী লীগের এসকে সিনহা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুস, ন্যাপের শাহাবুদ্দিন আহমেদ শিশির ও প্রয়াত মোজাফফর আহমদের একমাত্র মেয়ে আইভি আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।