মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে নিজের দলের নতুন ওয়েবসাইট প্রদর্শন এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এই দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতা মান্না বর্তমান সরকারের না পারা কাজের মধ্যে বলেছেন রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে না পারা, ডেঙ্গুর বাহক এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, দুর্নীতি নির্মূল করতে না পারাকে।
মান্না বলেন, “এই সরকার কোনো একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারছে না। রোহিঙ্গাদেরও এরা বের করতে পারবে না। বিরোধী দলকে নির্যাতন, অত্যাচার, গ্রেপ্তার করা ছাড়া মশাও মারতে পারে না।”
নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের বালিশ কাণ্ড এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দাকাণ্ডের প্রসঙ্গও তোলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন বালিশের দাম বেশি, না পর্দার দাম বেশি? লাখ টাকা দিয়ে এখন পর্দা বানায়, একথা আমরা কখনও শুনিনি। রূপপুর প্রকাশিত হয়েছে, তখন ভেতরে ভেতরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ তো ছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়নি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ তুলে ধরে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, “বিনা পরীক্ষায় এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অনেকে নাকি ডাকসুর নেতাও হয়েছে। এদের ভর্তি বাতিল করে দেন। কিন্তু ভিসির কী এই ক্ষমতা আছে?”
রোহিঙ্গা সঙ্কট
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান সরকারই আটকে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার মাধ্যমে বিষয়টিকে সমাধানের ‘অযোগ্য’ করে ফেলেছে।
“সরকার অনেক দেশকে বন্ধু দাবি করলেও কোনো দেশ বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়নি বরং তারা মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।”
মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করলেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি এখনও।
রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হয়নি বলে প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় দফা উদ্যোগ গত মাসে ভেস্তে যায়। রোহিঙ্গাদের আস্থা না ফেরার জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারকে দায়ী করছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধে যুক্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ হওয়ায় কক্সবাজারে তাদের বিচরণ শরণার্থী শিবিরে সীমাবদ্ধ রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার; তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারও বন্ধ করতে কঠোর হয়েছে।
মান্না বলেন, “সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন রোহিঙ্গাদের উপর নানারকম নিপীড়ন চালাচ্ছে। কিন্তু তারা এনআইডি পেয়ে যাচ্ছে। তাদের মোবাইল সিম বন্ধ করবে কীভাবে?”
রোহিঙ্গা সমস্যার সুরাহা না হওয়ার মধ্যে ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিকপঞ্জিতে ১৯ লাখ মানুষের স্থান না পাওয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন সঙ্কট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন নাগরিক ঐক্যের নেতা।
তিনি বলেন, “এনআরসির পরে সেখান থেকে বাদ পড়াদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদেরকে ভারতে থাকতে দেওয়া হবে না। সামনে বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।”
নাগরিক ঐক্যের এই আলোচনা সভায় দলের প্রধান উপদেষ্টা এসএম আকরাম, সমন্বয়ক শহিদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় নেতা মমিনুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, মঞ্জুর কাদেরও বক্তব্য রাখেন।