গণফোরামের সভায় ডাকসু ভিপি নুর

কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 05:05 PM
Updated : 7 Sept 2019, 05:07 PM

কামালসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতাদের উপস্থিতিতে এই সভায় নুর বলেছেন, “আজকে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দেশ যে স্বৈরতন্ত্রের দিকে যাবে, এটা আমরা ছাত্রসমাজ মেনে নিতে পারি না। দেশের কোনো সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ মেনে নিতে পারে না।”

শনিবার ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চে দলের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম সভাপতি কামাল।

বাম গণতান্ত্রিক জোটভুক্ত বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিও এই সভার মঞ্চে ছিলেন।

তারা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এই জোট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

নুর দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধানের ভিত্তিতে যদি দেশ চলে, তাহলে সেই বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ভিত্তির একটি হচ্ছে গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রের কক্ষে যে পেরেক ঢুকিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য কেবল আওয়ামী লীগই দায়ী না।

“মুক্তিযুদ্ধের সাম্য-মানবিক মর্যাদাবোধের চেতনার, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা কায়েম করতে পারিনি। তার ব্যর্থতা কিছুটা আমাদের পূর্বপুরুষদের নিতে হবে। জাতীয় রাজনীতিক যারা রয়েছেন, তাদের কিছুটা নিতে হবে।”

ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে শনিবার গণফোরামের ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরু। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সময়ের নেতা নুর কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেমে সরকারের বিরোধিতা করার পর তার উপর নির্যাতনের বিবরণও দেন।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি হয়েও নিরাপদ বোধ করছি না। কোথাও শান্তিতে যেতে পারছি না। না যেতে পারছি বাড়িতে, না যেতে পারছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাড়িতে ঈদ করতে গিয়েও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হামলার শিকার হয়েছি।”

নুর বলেন, “যারা শাসন ব্যবস্থায় আছেন, তারা মানুষের মনে সুক্ষ্মভাবে ভয় ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন- চড় খাবে কথা বলবে না, চুপ করে মাথা নত করে চলে যাবে।”

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ডাকসু ভিপি বলেন, “আমরা ছাত্র সমাজ কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নই। আমরা সকল রাজনৈতিক দলের অন্যায়, অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে।”

দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে যৌক্তিক বিষয়ে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে নুর বলেন, “মানুষের মতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করুন। গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত করুন। ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।”

গণফোরাম সভাপতি কামাল সভায় বলেন, “যেখানে গণতন্ত্র থাকে, সেখানে ভিন্ন দল থাকবে, বহু দল থাকবে। বহু দলের বহু মত থাকবে। কিন্তু সংবিধানের মূলনীতির বিরুদ্ধে কারও অবস্থান থাকতে পারে না। জনগণ ক্ষমতার মালিক, যারা এটা অস্বীকার করে, তারা আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হল জনগণের ঐক্য। যে ঐক্যের উপর ভর করে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি,  অসম্ভবকে আমরা সম্ভব করেছিলাম।”

বিএনপি নেতা মঈন খান বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বহুদলীয় গণতন্ত্র বাদ দিয়ে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা করছে সরকার। প্রয়োজনে প্রতি পদে পদে রক্ত দিতে হবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জেএসডি নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি রব বলেন, “বাংলাদেশে একমাত্র দল আওয়ামী লীগ, যে দলের কোনো আত্মসমালোচনা নেই। শুধু আছে অন্যের অবদান অস্বীকার করা, অন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।

“আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্র, সরকারে থাকলে স্বৈরতন্ত্র। বিরোধী দলে থাকলে তত্ত্বাবধায়ক, সরকারে থাকলে এক ব্যক্তির সরকার। বিরোধী দলে থাকলে ধর্মনিরপেক্ষতা আর সরকারে থাকলে মদিনা সনদ।”

সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রব বলেন, “এই মুহূর্তে স্বৈরাচারকে যদি সরাতে হয়, তাহলে একলা চল নীতি বাদ দিতে হবে। যত বড় দলই হোক, একলা হয়ে পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচারকে হটানো যায় না।”

ডাকসুর সাবেক আরেক ভিপি মান্না রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রসঙ্গ ধরে বলেন, “এই সরকার কেবল নিজের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়লাভ করতে পেরেছে। বিশ্বের কারও বিরুদ্ধে তার লড়াই করার কোনো ক্ষমতা নাই।”

ঐক্যের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “৩০ ডিসেম্বরের আগে যে ঐক্য হয়েছিল, এর চেয়ে আর কী চান? রাজপথে তো যাননি, মানুষকে বলে লাভ নেই।

“আমরা যে ঐক্য করেছিলাম, সেই ঐক্যের পেছনে ছিল কোটি কোটি মানুষ। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে সবার আগে। তারপরে সেই ঐক্য বিস্তৃত করবার চেষ্টা করবেন। খেয়াল করবেন, ঐক্য বিস্তৃত করতে গিয়ে তার মধ্যে যেন ফাটল দেখা না দেয়।”

গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়া, সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবু সাইয়িদও সভায় বক্তব্য রাখেন।