২১ অগাস্টের ভয়াবহ হামলা স্মরণে নানা কর্মসূচি

একুশ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2019, 06:59 PM
Updated : 20 August 2019, 06:59 PM

বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে সকাল ৯টায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়া হবে।

বিকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ।

দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এই হামলার দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর প্রকাশ করেছেন।

২১ অগাস্টকে বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় একটি দিন হিসাবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “২০০৪ সালের এ দিনে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

“এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেওয়া; বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২১ অগাস্টের কর্মসূচি পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সব স্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

১৫ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার আগে সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ দলের ২৪ নেতা-কর্মী মারা যান।

প্রাণে রক্ষা পেলেও স্থায়ীভাবে শ্রবণেন্দ্রীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা মানববর্ম সৃষ্টি করে তাকে রক্ষা করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান।

ওই ঘটনায় আহত  হন আওয়ামী লীগের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী, যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন, অনেকেই আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে যেতে পারেননি।

গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত নেতা-কর্মীরা

২১ আগস্টের এই গ্রেনেড হামলায় মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স করপোরাল মাহবুবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), সুফিয়া বেগম, হাসিনা মমতাজ রীনা, লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, রতন সিকদার, মো. হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মামুন মৃধা, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আতিক সরকার, নাসিরউদ্দিন সরদার, রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, শামসুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, ইছহাক মিয়া এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো দুজন মারা যান।

এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়। ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন হত্যাকাণ্ডের জন্য একটি এবং বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মোট দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির।

দুই মামলায়ই মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২২ আসামির বিচার শুরুর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে।

সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ চার দলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এ মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অধিকতর তদন্তে উঠে আসে। জানা যায়, হামলার বিষয়ে নোয়াখালীর জজ মিয়ার ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দেওয়ার বিষয়টি ছিল নাটক।

সম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট হামলার পর থেকেই তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে কাজ শুরু করে। হামলার অনেক আলামত সে সময় নষ্ট করে ফেলা হয়।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক অভিযোগপত্রের আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। নতুন করে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। রাষ্ট্রপক্ষের ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে মোট ২২৫ জন এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন।

গত বছরের ১০ অক্টোবর মামলার রায়ে ১৯ জনের ফাঁসি, ১৯ জনের যাবজ্জীবন, ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। এই আসামিদের মধ্যে তারেকসহ ১৬ জন রয়েছেন পলাতক।

রায়ে বিচারক বলেন, সেদিন গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগকে ‘নেতৃত্বশূন্য’ করার চেষ্টা করা হয়েছিল, আর তাতে ব্যবহার করা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা।