এমপি নন, তবু বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানির সুযোগ মুহিতের জন্য

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এখন আর বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানির সুযোগ পাওয়ার মত কোনো পদে নেই, তা জানার পরও তাকে সেই সুবিধা দিচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2019, 06:17 PM
Updated : 20 August 2019, 06:17 PM

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর তাকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার-ভি ৮ এসইউভি আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

এর ফলে তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি শুল্ক ও কর থেকে মাফ পেতে পারেন বলে ধারণা দিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা। 

এনবিআর বলছে, এমপি থাকাকালে মুহিত এ সুবিধা নেননি। তাই এখন এমপি না হলেও ‘বিশেষ বিবেচনায়’ তাকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তবে টানা দশ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ‘রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়া’ মুহিতের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

মুহিতকে এই সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরে একটি আদেশ জারি করা হয় সোমবার।

সেখানে বলা হয়, আবুল মাল আবদুল মুহিত দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হননি।

“সে প্রেক্ষিতে তিনি শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা প্রাপ্য না হলেও বাস্তবিক অবস্থার নিরিখে এক্ষেত্রে উক্তরুপ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কতৃক অনুমোদিত হয়েছে।”

মুহিতের আমদানি করা ওই গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ছাড় করার জন্য জাতীয় সংসদ সচিবলায়ের সুপারিশ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হাতে এসেছে বলে জানানো হয় ওই আদেশে।

সেখানে বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়’ টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার- ভি৮ ২০১৮ মডেল ওই গাড়িটি খালাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সমুদয় আমদানি শুল্ক, মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।

জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী যে গাড়িটি আমদানি করছেন, তার সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসির বেশি। এ ধরনের নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রযোজ্য হয়।

“টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার-ভি ৮ এর মার্কেট প্রাইস যদি ৭০ হাজার ডলারের মত হয়, তাহলে বাংলাদেশে টাকায় তা হয় ৬৭ লাখ টাকার বেশি। সেক্ষেত্রে তিনি সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি মাফ পাবেন।”

তবে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য বরাবরের মতই তিনটি শর্ত দিয়েছে এনবিআর।

১. আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই গাড়ি হস্তান্তর বা বিক্রি করা যাবে না। যদি হস্তান্তর বা বিক্রি করা হয়, তালে অব্যাহতি পাওয়া সব শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।

২. গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হস্তান্তর বা বিক্রির আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মতি নিতে হবে।

৩. গাড়ি আমদানির তারিখের পাঁচ বছরের মধ্যে আমদানিকারকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারীদের ওই গাড়ির মালিক হতে কোনো শুল্ক কর পরিশোধ করতে হবে না।  কিন্তু তারা অন্য কারও নামে হস্তান্তর বা বিক্রি করতে চাইলে অব্যাহতি পাওয়া শুল্ক ও কর আগেই পরিশোধ করতে হবে।

বর্তমানে এমপি না হওয়ার পরও মুহিত কীভাবে এই সুবিধা পাচ্ছেন জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “সাবেক অর্থমন্ত্রী গত ৫ বছর যে এমপি ছিলেন, সে সময় উনি এই সুবিধা নেননি। তাই তাকে বিশেষ বিবেচনায় এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

“তাছাড়া সংসদ সচিবালয়ে হয়ত উনি আগেই আবেদন করে রেখেছিলেন। তাই সংসদ সচিবালয় এ বিষয়ে এনবিআরকে পত্র দিয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে সংসদ সচিবালয়ে যোগাযোগ করা হলে সেখানেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

একজন অতিরিক্ত সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাবেক অর্থমন্ত্রী যখন এমপি ছিলেন, তখন হয়ত গাড়ি আমদানির এ সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা এনবিআরকে পত্র দিয়েছিলাম। তিনি এমপি না থাকা অবস্থায় তার জন্য এ সুবিধা দিতে এনবিআরকে পত্র দেওয়া হয়েছে বলে আমার মনে নেই।”

রাজস্ব বোর্ডের জারি করা আদেশে দেখা যায়, আভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে চিঠি পেয়েছে চলতি বছরের ২১ মে। আর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে গত ১২ জুন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদ্যস আবুল মাল আবদুল মুহিত ফোন না ধরায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।