ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক হতে চান ১০৮ জন

ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ১০৮ জন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2019, 12:23 PM
Updated : 18 August 2019, 12:45 PM

এর মধ্যে ৪২ জন সভাপতি এবং ৬৬ জন সাধারণ সম্পাদক হতে চাইছেন।

সভাপতি পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই। সাধারণ সম্পাদক হতে তিন নারী মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তারা হলেন- বদরুন্নেসা কলেজের নাদিয়া পাঠান পাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনসুরা আলম এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডালিয়া রহমান।

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির ছাত্র সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে, যাতে সারাদেশে ছাত্রদলের ১১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন।

শনিবার শুরু হয়ে রোববার মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষ হওয়ার পর ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে ১০৮ জনের ফরম কেনার হিসাব পাওয়া যায়।

পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে আসা কর্মী-সমর্থকদের ভিড় আর স্লোগানে মুখর ছিল নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয়।

ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যে প্রত্যাশা করেছিলাম, তার অধিক মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। আমরা যত ফরম ছাপিয়েছিলাম, দ্বিতীয় দিনে দুপুরের দিকে তা শেষ যায়। পরে আবার ফরম ছাপিয়ে বিক্রি শুরু করতে হয়।”

তিনি বলেন, “তারুণ্যের অহংকার আমাদের অভিভাবক তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় পরিচালিত ছাত্রদলের নতুন ধারার গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সংগঠনের সব পর্যায়ে যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে, তার প্রমাণ হচ্ছে আজকে মনোনয়নপত্র এত পরিমাণ বিক্রি।”

সাত্তার জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৯ ও ২০ অগাস্ট। এরপর বাছাই চলবে ২২ থেকে ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ অগাস্ট।

তারপর প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২ সেপ্টেম্বর। প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১২ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত।

ছাত্রদলের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হতে এবার বয়সের একটি শর্ত যোগ করা হলে তা নিয়ে সংগঠনটির একাংশ প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নেমেছিল। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও ভাংচুর চালানো হয়। তখন কয়েকজনকে বহিষ্কারও করা হয় ছাত্রদল থেকে। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য সংগঠনের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

তখন প্রার্থী হওয়ার শর্তে বলা হয়, প্রার্থীদের অবিবাহিত হতে হবে, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে এবং কেবল ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই প্রার্থী হতে পারবে। প্রার্থীদের ন্যূনতম স্নাতক পাসের সনদের সত্যায়িত অনুলিপি জমা দিতে হবে।

ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান।

শুরুতে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন পর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিল।

পদপ্রত্যাশীরা

সভাপতি পদে: মো. মামুন খান, আমিনুল হাকিম মুন্সি, খলিলুর রহমান, আসাদুল আলম টিপু, আবু জাহান চৌধুরী হিমেল, এম আর আরজ আলী শান্ত, আল আমিন কাউসার, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, রিয়াজ মো. তানভীর রেজা, মো. ফজলুল হক নিরব, মো. আব্বাস আলী, তানভীর আহমদ খান ইকরাম, জসিম মোল্লা, মো. এরশাদ খান, মো. এহসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জুয়েল মৃধা, মাসুদ রানা, মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, হাফিজুর রহমান, এবিএম মাহমুদুল আলম সরদার, সোলায়মান হোসাইন, মো. সুরুজ মন্ডল, মো. ইলিয়াছ, মো. আজিম উদ্দিন মেরাজ, আশরাফুল আলম ফকির লিংকন, ফজলুর রহমান খোকন, মাইনুল ইসলাম, মো. আবদুল মাজেদ, বিশ্বজিৎ ভদ্র, আল মেহেদি তালুকদার, সাজিদ হাসান বাবু, সিহাবুর রহমান, এস এম আল আমীন, আবদুল হান্নান, মো. আলী হাওলাদার, এসএম আমিনুল ইসলাম, শামীম হোসেন, মো. আল আমিন, আরাফাত বিল্লাহ খান, নজরুল ইসলাম নাহিদ ও জসিম উদ্দিন।

সাধারণ সম্পাদক পদে: সাইদ মাহমুদ জুয়েল, মো. আলাউদ্দিন খান, এম এ কাইয়ুম, মশিউর রহমান রনি, এমদাদুল হক মজুমদার, মানসুরা আলম, মো. হামিদ সাজ্জাদ হোসেন, মো. নাঈম হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. হাসান তানজিল হাসান, শেখ আবু তাহের, মো. তাবিবুর রহমান, এম সাখাওয়াত হোসাইন, ডালিয়া রহমান, মিজানুর রহমান সজীব, আজমীর হোসেন, আমিনুর রহমান আমিন, শাহনেওয়াজ, মুন্সি আনিসুর রহমান, আবদুল মোমেন মিয়া, নাজমুল হক হাবিব, আনিসুর রহমান সুমন, এবিএম জহিরউদ্দিন সোহেল, এন রাকীব জুয়েল, মিজানুর রহমান শরীফ, মো. ওমর ফারুক হিমেল, রিয়াদ মো. ইকবাল হোসেইন, একরামুল হাই নাঈম, ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী, মো. আবদুল মান্নান, মো. জামিল হোসেন, ইকবাল হোসাইন শ্যামল, মো. আবুল হাসান চৌধুরী, এএএম ইয়াহিয়া, নুরুল ইমরান মজমুদার শিশু, মো. মহিন উদ্দিন রাজু, রাকীবুল ইসলাম রাকিব, আরিফুল হক, আজিজুল হক সোহেল, রাশেদ ইকবাল খান, মো. জোবা্ইর আল মাহমুদ রিজভী, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, মাজেদুল ইসলাম রুম্মন, মাহমুদুল আলম শাহিন, মো. ইউসুফ কামাল জনি, বাবুল আখতার শান্ত, মো. মিজানুর রহমান, নাদিয়া পাঠান পাবন, জাকিরুল ইসলাম জাকির, আশিকুর রহমান সুমন, মো. জহিরুল ইসলাম দিপু, মো. আল মামুন, মো. সাইদুর রহমান সোহেল, মাহতাব উদ্দিন জিমি, জুলহাস উদ্দিন, আতাউর রহমান, কেএমএস মুসাব্বির, কাজী মাজহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ আবুল বাশার, আশরাফুল আলম ফকীর লিংকন, আসাদুজ্জামান, সাদেকুর রহমান সাদিক, আশরাফুল আলম, দেলোয়ার হোসেন, সুলায়মান হোসাইন।

‘মেধাবী নেতৃত্ব সন্ধানেই এই নির্বাচন’

ছাত্রদলের নতুন কমিটি নির্বাচনে আপিল কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “এই নির্বাচনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মেধাবী ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব গড়ে তোলা।”

৮০ এর দশকে ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে থাকা দুদু বলেন, “ছাত্রদলে নতুন সম্ভাবনাময় দিন সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শে সাবেক ছাত্রদলের নেতারা উদ্যোগী হয়ে একটি ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

“এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এদেশে স্বৈরতন্ত্রের পতনের অতীতে যে দৃষ্টান্ত ছাত্রদল স্থাপন করেছে, ভবিষ্যতেও সেই দৃষ্টান্তকে উজ্জ্বল পতাকার মতো পতপত করে তারা আগামী দিনে আকাশে ওড়াবে।”

৯০ এর দশকের শুরুতে কাউন্সিলে নির্বাচিত ছাত্রদলের সভাপতি বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ছাত্রদলের কাউন্সিল হঠাৎ করে নয়। ছাত্রদল জন্মলগ্ন থেকেই তার কাউন্সিল ও সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে।”

বিএনপিতে গণতন্ত্রের চর্চার ধারাবাহিকতা ছাত্রদলেও রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের প্রতি যে অঙ্গীকার, এই ধারা তো তৈরি করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, এই ধারা তো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার।”

ছাত্রদলের আগামী কাউন্সিল উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, “ছাত্রদলের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও চর্চা অব্যাহত রাখতে চাই। সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেধাবী, দক্ষ, প্রতিভাবান নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।”

“গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা ও কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে ছাত্রদল ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবে,এটাই আমরা প্রত্যাশা করি,” বলেন ডাকসুর সাবেক জিএস ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোকন।

ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসানও উপস্থিত ছিলেন।