মওদুদরা এ দেশের ‘ইভিল জিনিয়াস’: কৃষিমন্ত্রী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ আহমদকে একজন ‘ইভিল জিনিয়াস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘তার মত’ মানুষদের জন্যই বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2019, 11:07 AM
Updated : 18 August 2019, 11:45 AM

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দীর্ঘদিন আটকে রাখা এবং এক সময় জাতির জনকের সঙ্গে যারা ছিলেন, পরবর্তীতে তাদের কারও কারও রূপান্তরের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রোবাবর সচিবালয়ে এ মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।  

তিনি বলেন, “কিছু সচেতন মানুষ, এই যে ব্যারিস্টার মওদুদ- আইনমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেন নাই। সেখানে আইন করে এটাকে বন্ধ করা হয়েছিল। সে আইন বাতিল হয়েছে এবং তারপর বিচার করা হয়েছে।… তারা বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিল…।

কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।

অবশ্য পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মওদুদ বিএনপিতে ফেরেন এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

মওদুদ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে নিয়ে ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মন্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেন রাজ্জাক।

মাউন্টব্যাটেন বিভিন্ন সময়ে জিন্নাহর সমালোচনা করতে গিয়ে তাকে ক্ষমতালিপ্সু, মানসিক রোগী, এমনকি বেজন্মাও আখ্যায়িত করেন। একবার জিন্নাহকে তিনি বর্ণনা করেন ‘দি ইভিল জিনিয়াস অব দা হোল থিং’ হিসেবে।

সেই প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ নেতা রাজ্জাক বলেন, “মওদুদরা হলেন এদেশের 'ইভিল জিনিয়াস'…। এই শয়তানদের জন্য দেশটা পিছিয়ে গেছে।”

তার যুক্তি, যে আদর্শের ভিত্তিতে ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল, যে আদর্শের ভিত্তিতে তারা রক্ত দিয়েছিল, তা অব্যাহত থাকলে দেশ এগিয়ে যেত। কিন্তু ১৯৭৫ সাল থেকে ‍সুপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে।

ছুটি শেষে রোববার দপ্তরে ফিরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এসব বিষয়ে কথা বলছিলেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়েও আমি এ কথাগুলো বলছি, কারণ জাতির সঠিক ইতিহাস জানা দরকার, সঠিক ইতিহাস না জানলে জাতি বিভ্রান্ত হয়।”

বন্যায় ফসলের ক্ষতি ‘সামান্য’

কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন, এবার বন্যার সময় জমিতে মূল ফসল ছিল না বলে ক্ষতির পরিমাণ ‘সামান্য’।

“বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বীজতলা চাষিরাও করে, আমরাও মাঠপর্যায়ে বীজতলা তৈরির জন্য মাঠ পর্যায়ে বীজ, সার দিয়ে সহযোগিতা করেছি।”

কৃষকের কোনো সমস্যা হবে না- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার যা পরিস্থিতি, সেটা আমনের জন্য খুবই সহায়ক। এ জন্য আমার বিশ্বাস, আমনের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটা অর্জন হবে। আশা করি ভালো ফসল পাব।”

বন্যার পানি নেমে গেলে মাশকলাই বোনা হয়, সেজন্য সরকার ইতোমধ্যে সব এলাকায় মাশকলাইয়ের বীজ পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানান রাজ্জাক।

তিনি বলেন, “আমি সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছি, বন্যা পুনর্বাসনের কাজের কী পরিস্থিতি, ক্ষয়ক্ষতির আলোকে আমরা কী কী করতে পেরেছি সেটি নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে তিন দিনের মধ্যে কৃষি সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন।”

আগে কৃষি উৎপাদন বৃষ্টিনির্ভর থাকলেও এখন সে অবস্থা নেই এবং এখন বোরো মৌসুমের ধানই ‘মূল ফসল’ হয়ে গেছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “বোরো থেকে আমরা দুই কোটি টন চাল পাই। এ চাল পেতে আমাদের যে কি পরিমাণ মাটির নিচের পানি তুলতে হয়- এটা কেউ জানে না।”

ভূগর্ভস্থ ওই পানির আধার পূরণ করতে বৃষ্টি প্রয়োজন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “তবে শুধু বৃষ্টির পানি পুরো রিচার্জে সক্ষম নয়। এর জন্য বন্যাও প্রয়োজন। বন্যা বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, আবার ক্ষতিও করে।”