বাকশাল গঠনে সিপিবির ভূমিকা নিয়ে ভুল ধারণা: সেলিম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পরামর্শে ও সিপিবির উসকানিতে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করেছিলেন বলে যে ধারণা অনেকের রয়েছে, তা ঠিক নয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2019, 05:44 PM
Updated : 16 August 2019, 06:31 PM

তিনি বলছেন, ওই সময়কার সিপিবি নেতারা ‘একদলীয় ব্যবস্থা’ তথা ‘বাকশাল’ গঠন না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদের সে পরামর্শ নেননি বঙ্গবন্ধু।

সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনের পর ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সব দল নিষিদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন।

বাকশালের বিধিবিধানে বিভিন্ন সরকারি চাকুরে ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ অপরাপর সব দল ও সংগঠনকে বাকশালে যোগ দিয়ে অপশক্তির মোকাবেলা এবং দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বলা হয়। তবে ওই বছরের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাকশালের বিলোপ ঘটে।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীর পরদিন এক ফেইসবুক পোস্টে বাকশাল গঠন এবং তাদের ভূমিকার প্রসঙ্গ তোলেন সিপিবি সভাপতি সেলিম।

সেখানে তিনি লেখেন, “১৯৭৫ সালে সিপিবি 'একদলীয় ব্যবস্থা’ তথা ‘বাকশাল’ গঠন না করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিয়েছিল। তিনি পার্টির পরামর্শ গ্রহণ করেননি।

“এমতাবস্থায় ‘বাকশাল’ গঠিত হয়ে যাওয়ার পরে পার্টিকে (সিপিবি) প্রকাশ্যে ‘বিলুপ্তির’ ঘোষণা দিতে হলেও আসলে পার্টি বিলুপ্ত করা হয়নি। খুবই গোপনে, অনেকটা সংকুচিত আকারে, পার্টির অস্তিত্ব ও তার কাঠামো বহাল এবং সক্রিয় রাখা হয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই সেকথা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি অনেক পার্টি সদস্যকেও সে বিষয়টি অবগত করে ওঠা সম্ভব হয়নি। গোপনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধীরে-ধীরে পার্টি কাঠামো সম্প্রসারিত করা হচ্ছিল।”

তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “এতদিন পর এই কথায় অন্য কোন গন্ধ পাওয়া যায়। প্রথম কথা হল, সমাজতন্ত্র নিজেই একদলীয় ব্যবস্থা, তাই বাকশালকে একদলীয় বলা তার জন্য মানায় না। …কমরেড ফরহাদ নেই, মনি সিংহ নেই… সেলিম সাহেব এসব কথা তারা জীবিত থাকতে বলেননি, তারাও কখনও বলেননি। বিষয়টা অদ্ভূত। … তখন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সিপিবির মূল নীতি নির্ধারকও সেভাবে ছিলেন না। এখন তার কাছ থেকেই নতুন তথ্য দলের নতুন চেহারা বৈ কি!!!”

বাকশাল নিয়ে ফেইসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা না করার বিষয়ে সিপিবির অফিসিয়াল ডেলিগেশন কমরেড মনি সিং, কমরেড ফরহাদ, কমরেড বারীণ দত্ত- তারা গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, এটা করা ঠিক হবে না। সমাজতন্ত্র করার জন্য ওয়ান পার্টি ইজ নট এসেনসিয়াল। স্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি থাকা উচিত, স্বাধীন সংগঠনগুলো নিয়ে ঐক্যজোট করেন।

“এটা অনেক পুরনো তথ্য। ১৯৮০ সালের কংগ্রেসের কথা। আগামীকাল আমি পুরোটাই লিখে দেব। তৃতীয় কংগ্রেসে আমরা সার্বিক বিষয়ের মূল্যায়ন তুলে ধরেছিলাম। তাতে গ্রহণ করা হয়।”

তিনি বলেন, “সোভিয়েত ইউনিয়নের পরামর্শে ও সিপিবির উসকানিতে বাকশাল গঠন করা হইছে- এটা মিথ্যা ধারণা। কমিউনিস্ট পার্টি এর প্রবক্তা নয়। বরং উল্টো বঙ্গবন্ধুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে গিয়ে বলে এসেছে। মনি সিং, ফরহাদ সাহেবরাই তো এটা লিখে গেছে। ১৯৮০ সালে তারাই তো জীবিত, তারাই ড্রাফট করেছে। আমি তো মাত্র জেল থেকে বের হয়েছি। আমরা আগাগোড়াই এটা বলে এসেছি।”

ইশতিয়াক রেজার প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিপিবি সভাপতি সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেকে বিষয়টা জানত না। সেটা আমাদের দোষে নয়। যারা জানত না তারা আওয়ামী লীগ আর বিএনপি, খালেদা কী রঙের শাড়ি পরল, হাসিনা কী দিয়ে ডিনার করল-এটা নিয়ে এত ব্যস্ত যে কমিউনিস্ট পার্টির এগুলোর খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেনি।

“ইশতিয়াক সাহেবরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির খবর রাখেন, সিপিবির খবর রাখবেন না। এটা তো আমার দোষ না। ১৯৮০ সাল কী এতোদিন পর নাকি? নানা প্রবন্ধে লিখেছি, উনার সঙ্গে তো এসব টকশোতেও বলেছি।”