সরকার দেশকে পরনির্ভরশীল করার চক্রান্তে: ফখরুল

সরকার দেশকে ‘পরনির্ভরশীল করার চক্রান্তে’ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে এবং চামড়া নিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তারই অংশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2019, 08:46 AM
Updated : 16 August 2019, 08:46 AM

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার নয়া পল্টনে এক দোয়া মাহফিলে মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্য আসে।

তিনি বলেন, “ঈদের পরে চামড়ার আসে। চামড়া শিল্পের মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এক সময় পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে, আজকে ধ্বংস করা হচ্ছে চামড়া শিল্পকে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সুদূর প্রসারী যে ষড়যন্ত্র, যে চক্রান্ত… বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করার, সেই কাজ বহুদূর এই সরকার এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারা শুধু জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে তাই নয়, এ দেশকে পরনির্ভরশীল করার জন্য সেই চক্রান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে।”

এবার ঈদের দিন থেকেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসতে থাকে। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া থাকা টাকা দেননি- এই যুক্তি দেখিয়ে আড়তদাররা চামড়া কেনা বন্ধ রাখলে সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে।

চামড়া সংরক্ষণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা ফড়িয়া আর মৌসুমী ব্যবসায়ীদের থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নামমাত্র দামে চামড়া কিনেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

দিনাজপুরে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাজারে ফেলে চলে যান মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামেও লাখখানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেগুলো সরিয়ে মাটিচাপা দেয় সিটি করপোরেশন।

এর মধ্যেই বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাঁচা চামড়ার দাম নামিয়ে দিয়ে ‘পাশের দেশে পাচার’ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আর এর পেছনে রয়েছে ‘ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার সিন্ডিকেট’।

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে।

চামড়ার বাজারে কেউ কারসাজি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মির্জা ফখরুল বলেন,  তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে দেশের অর্থনীতিকে এভাবে ‘ফোকলা করে ফেলা’ সম্ভব হতো না। এ কারণেই ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে দেড় বছর ধরে কারাবন্দি। অসুস্থতার জন্য কয়েক মাস ধরে তিনি রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

আগে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা হত ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকাণ্ডের দিনে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্কিত একটি অধ্যায় হয়ে আছে। এবার ১৫ অগাস্ট কোনো কর্মসূচি না রেখে তার পরদিন দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দেয় বিএনপি।

সেই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক জীবন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হচ্ছে রাজপথে। তিনি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে জনগণকে সংগঠিত করেছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, একজন গৃহবধূ যিনি রাজনীতি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিলেন।

“যখন তার উপর এসে পড়েছে, তখন তিনি (খালেদা জিয়া) জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে। এই নেত্রী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে শুধু কারাবরণই করেননি, তার সবচেয়ে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে বিএনপি ধবংস হয়ে যাবে। খালেদা জিয়াই তখন সামনে এসে ‘বিএনপির পতাকাকে তুলে নিয়ে জনগণকে সংগঠিত’ করেন।

এই পরিক্রমায় দীর্ঘদিনের আবাসস্থল থেকে খালেদা জিয়ার ‘উচ্ছেদ’ হওয়া, বিদেশে তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু এবং বড় ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনে ‘নির্বাসিত’ জীবনের কথাও অনুষ্ঠানে বলেন ফখরুল।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের সময় খালেদা জিয়াই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ‘ভিত্তি’ গড়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যত উন্নয়ন দেখা যায় তার ভিত্তি বিএনপি সরকারগুলোর আমলেই হয়েছে, জিয়াউর রহমান তা শুরু করে গেছেন।”

দোয়া মাহফিলে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও দীর্ঘজীবন কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, জ্যেষ্ঠ নেতা শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, ওবায়দুল ইসলাম, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইশরাক হোসেন, নিপুন রায় চৌধুরী, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, অঙ্গসংগঠনের আনোয়ার হোসেইন, সাই্যফুল আলম নিরব, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ‍ভুঁইয়া জুয়েল, আবুল কালাম আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।