পাকিস্তানি সেনারা যে ‘সম্মান’ দিত, তাও এখন পাচ্ছেন না খালেদা: অলি

স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর নির্বিচার হত্যা ও ধর্ষণ চালানো পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়া যে ‘সম্মান’ পেয়েছিলেন, নিজের দেশের লোকদের কাছে তাও পাচ্ছেন না বলে খেদ প্রকাশ করেছেন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অলি আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2019, 04:37 PM
Updated : 2 August 2019, 05:13 PM

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে এলডিপি চেয়ারম্যান পাকিস্তানি সেনাদের সাংস্কৃতিক মান নিয়েও প্রশংসা করেন।

অলি বলেন, “বেগম জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা। কারণ তিনি পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি ছিলেন।... পাকিস্তানি সৈন্যরা অনেক কিছু করেছে। কিন্তু তাদের যে একটা কালচার, তাদের যে একটা স্ট্যান্ডার্ড সেটা তারা বিসর্জন দেয় নাই। বেগম জিয়াকে সেই সম্মান তারা (পাকিস্তান) দিয়েছিল। আজকে নিজের দেশের লোকদের কাছে সেই সম্মান তিনি পাচ্ছেন না।

“যাদেরকে আমরা গালি দেই, তারাও বেগম জিয়াকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছিল। অথচ যারা জাতির পিতার সন্তান হিসেবে দাবি করেন, তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোনো সন্মান নাই।”

পাকিস্তানিরা খালেদা জিয়াকে কীভাবে সম্মান দিয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমি এখানে জনগণকে বলতে চাই, যে নিয়াজি সাহেব (আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী) এখানে ছিলেন। তিনি ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রথম অধিনায়ক। প্রথম অধিনায়ক হলো পিতার মতো। সুতরাং ব্যাটেলিয়নের অন্যান্য অফিসার হলো তার সন্তানের মতো, অফিসারদের স্ত্রীরা ছিল তার মেয়ের মতো।

“পাকিস্তানি সৈন্যরা অনেক কিছু করেছে। কিন্তু তাদের যে একটা কালচার, তাদের যে একটা স্ট্যান্ডার্ড সেটা তারা বিসর্জন দেয় নাই।”

এক নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে সাহসিকতার জন্য বীর বিক্রম খেতাব পান অলি। পরে সামরিক শাসক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালে এই দল ছেড়ে নতুন দল এলডিপি গঠন করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে রয়েছেন।

সম্প্রতি তার নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় মুক্তি মঞ্চের কর্মসূচি ঘোষণার জন্য কারওয়ান বাজারে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়।

খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের উদ্দেশ্যে অলি বলেন, “আমরা অনুরোধ করব, তার (খালেদা জিয়া) বয়স বিবেচনায়, তার অবদান বিবেচনায় নিয়ে, তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান বিবেচনায় নিয়ে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে মুক্তি দান করবেন।”

একই সাথে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ জনগণকে বলব, ঘরে বসে থাকার সময় শেষ। এর অর্থ এই না- ভাংচুর করবো, লাঠি হাতে নেব, ধবংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যাব। না, এটা আমরা পছন্দ করি না। দেশের ক্ষতি হোক- এই ধরণের কর্মকাণ্ডে আমরা লিপ্ত হতে চাই না।”

ছোট সভা, ছোট মিছিলের একত্রিত হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু পুনঃনির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

আগামী ৬ আগস্ট ঢাকায় জাতীয় মঞ্চের উদ্যোগে সার্বিক বিষয়ের ওপর কর্মশালা হবে বলে অলি জানান।

মশা মারার ওষুধ আনতে দেরির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে প্রতিদিন প্লেন বিদেশে যাচ্ছে। একটা প্লেন ভাড়া করে ওই ওষুধ আনা কোনো কঠিন কাজ নয়। আমি মন্ত্রিত্বে থাকলে ১০ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো দেশ থেকে ওষুধগুলো নিয়ে আসতাম। মানুষের জীবন রক্ষার জন্য একটি প্লেন পাঠানো বড় কিছু না।

“মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত প্লেন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। সেখানে একটি প্লেন নিয়ে ১৮ কোটি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ওষুধগুলো আনতে বাধা কোথায়?”

নতুন জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, বিএনপির সারোয়ার হোসেন, জমিয়তে উলামা ইসলামের মুফতি মুনির হোসেন কাশেমী, জাতীয় দলের রফিকুল ইসলাম, এনডিপির মো. তাহের চৌধুরী, এলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, তমিজউদ্দিন ও কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না সেখানে ছিলেন।