শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির শরিক নাগরিক ঐক্যের এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক মান্নার এমন মন্তব্য আসে।
তিনি বলেন, “এখন দেশের সবকটি জেলা ডেঙ্গু কবলিত। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, এই পর্যন্ত ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা (সরকার) এখন পর্যন্ত মশা মারবার কার্য্কর ওষুধ আমদানি করতে পারেনি, কিন্তু মশা মারবার নাটক করছে।”
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রেকর্ড ১৯ হাজার ৫১৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে সরকারি খাতায়। এর মধ্যে কেবল বৃহস্পতিবারই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভের্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭১২ জন ডেঙ্গু রোগী।
ডেঙ্গুর বাহক যে মশা, তার প্রজননস্থানগুলো ধ্বংসে সফলতা না এলে এ রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গুর ঝুঁকি যে সেপ্টেম্বর মাসেই সবচেয়ে বেশি থাকে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এখনই যদি এই পরিস্থিতি হয়ে থাকে, তাহলে সেই সময়ে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।”
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘ব্যর্থতার’ সমালোচনা করতে গিয়ে ভারতের কলকাতায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাফল্যের প্রসঙ্গ টানেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক।
তিনি বলেন, “এমন এক সময় আমাদের দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার হচ্ছে যখন আমাদের পাশের পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু কমতে কমতে এখন খুবই সামান্য পর্যায়ে আছে।
“একটা দেশের সরকারের জবাবদিহিতা ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে সেটার ফল কী হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সেটা দেখিয়ে দিয়েছে।”
মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে লন্ডন সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা সংবাদমাধ্যমে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তারও সমালোচনা করেন মান্না।
তিনি বলেন, “প্রতারণামূলক আচরণ থেকে বিরত থাকুন। কোনো কিছুতে ব্যর্থ হলেই প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।… মশা মারতে হবে- প্রধানমন্ত্রীর এ রকম নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করে অকাল কুষ্মাণ্ডরা। মানুষের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সরকারের যে কোনো অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।”
মশার ওষুধ প্রসঙ্গ
সিটি করপোরেশন মশা মারতে যে ওষুধ ব্যবহার করে, তা ‘কার্যকর নয়’ বলে আইসিডিডিআর,বি জানানোর পরও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়োয় সরকার ও সিটি করপোরেশনের সমালোচনা করেন মান্না।
এখন হাই কোর্টের নির্দেশে সিটি করপোরেশন কার্যকর ওষুধ আমদানির উদ্যোগ নিলেও সেই প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ্ব থাকবে- সেই সন্দেহ তিনি প্রকাশ করেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “মশা মারা নিয়ে আমাদের দেশে সাহিত্যে বহু কাহিনী আছে। এখানে আরেকটা কাহিনী হবে। খুব নিয়ম মাফিক টেন্ডার করে যে পদ্ধতি আছে তার ভিত্তিতে এটা কেনা হবে বলে মনে হয় না।
“বাজারে ইতোমধ্যে কথা এসেছে, যারা প্রতিষ্ঠিত বড় বড় কোম্পানি, তাদের কাছ থেকে না নিয়ে চীনের একটা কোম্পানি থেকে এটা কেনা হবে এবং সেটার দাম ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে স্বচ্ছতা থাকছে কি না আমাদের প্রশ্ন আছে।”
ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্যাম্প স্থাপন এবং প্রতিদিন মশা মারার ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিনামূল্যে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয় নাগরিক ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন থেকে।
অন্যদের মধ্যে সংগঠনের উপদেষ্টা এসএম আকরাম, কেন্দ্রীয় নেতা মোমিনুল ইসলাম, মোফাখারুল ইসলাম নবাব, শহীদুল্লাহ কায়সার, জাহিদ-উর রহমান ও জিল্লুর চৌধুরী দিপু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।