ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে পুরান ঢাকায় র্যালি করতে গিয়ে বাধা পাওয়ার পর বিএনপির এই নেতা বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বিত কর্মসূচি নেন, আর তাতেই সফল হয়েছিলেন তারা।
এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০০০ সালে, সে সময় এই রোগে মারা যান ৯৩ জন। পরের বছর শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট, ওই সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্বের সাবেক অধ্যাপক খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিন বছর পর থেকেই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমতে থাকে এবং কয়েক বছর এতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে আসে।
ডেঙ্গুর এই অবস্থার জন্য সরকার ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, “যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন সমন্বিতভাবে এই বর্ষা মৌসুমের আগেই উদ্যোগ গ্রহণ করত তাহলে ডেঙ্গুর এই মহামারি সৃষ্টি হতে না। আমিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলাম, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু ছিল। তখন আমরা প্রথমে এডিস মশা নির্মূল করার জন্যে সিটি করপোরেশনের সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
“আমি প্রত্যেক মৌসুমের আগে নগর ভবনে তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সভা করে কৌশল নির্ধারণ করেছি এবং আমরা তখন সফল হয়েছি। তখনও ডেঙ্গু হয়েছে কিন্তু তা প্রতিরোধের জন্য আমরা সচেতন ছিলাম বলে তা এত বড় আকার ধারণ করেনি।”
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী একথা বললেও ডেঙ্গুর দায় নিতে নারাজ বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।
মশার ব্যাপক বিস্তারের কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে মন্তব্য করে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা রসিকতাও করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী: “যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন বাড়ে.. আমাদের দেশে এসে। সেভাবে মসকিটু পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে। .. প্রডাকশন যদি কম হত, এডিস মশা কম হত। মানুষ আক্রান্ত মশার কামড় কম খেত, ডেঙ্গু কম হত।”
পরে সংসদীয় কমিটিতেও এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মশা মারার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, তারা ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ করছেন।
দুপুর ২টার দিকে বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে পূর্ব ঘোষিত র্যালি বের করতে গিয়ে বাধা পেয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকের সামনেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন বিএনপি নেতারা।
ডেঙ্গু নিয়ে জনসচেতনতামূলক এই কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আমরা জনগণের রাজনীতি করি বলেই দায়িত্ববোধ থেকে জনগণকে সচেতন করার জন্য এই কর্মসূচি নিয়েছি।
“এখনও যদি মানুষ সচেতন হয়, যার যার বাড়িতে স্বচ্ছ পানি আটকে থাকে সেই পানি তারা যদি বিনষ্ট করে দেয় এবং সরকার এখনও সচেষ্ট হয় তাহলে যে সরকারি অফিস-আদালতগুলো রয়েছে, ছাদের কেউ খবর রাখে না সেই ছাদগুলোতে যদি মশার ওষুধ ছিটানো হয় তাহলে এটাকে কমিয়ে আনা সম্ভব।”
“এই এডিস মশা এবার নির্মূল করা না হলে আগামী বছরও এডিস মশার ডিম থেকে যাবে। তাই অবিলম্বে দ্রুত কার্যকর ওষুধ আমদানির দাবি জানাচ্ছি।”
বিএনপির মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল জানান, র্যালি নিয়ে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে তারা ডেঙ্গুর মশা ও এই রোগ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে চেয়েছিলেন।
“বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণ যখন কবুতর ছানার মতো ভীষণ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছেন, ভীষণ আশঙ্কার মধ্যে বসবাস করছেন যে কোনো সময় ডেঙ্গু মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন এবং তাদের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে হতে পারে। এই অবস্থায় যখন দেশে একটা জাতীয় ঐক্য দরকার, সমস্ত দল-মত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যমত হয়ে এই মহামারি ঠেকাতে সকলে পুরোপুরি কাজ করা দরকার, সেই সময়ে আমরা আশা করেছিলাম আমাদের এই জনসচেনতা কর্মসূচিতে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাব।”
এ সময় বিএনপির মহানগর দক্ষিণের ইউনুস মৃধা, হাবিবুর রশীদ হাবিব, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনসহ মহানগরের কয়েকশ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১টা থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পুলিশের উপস্থিতির কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীরা দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমবেত হয়। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়।