ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারকে বিএনপি নেতা মোশাররফের পরামর্শ 

ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে ‘ডেঙ্গু সেন্টার’ ঘোষণা করে সেগুলোতে সর্বাত্মক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2019, 06:42 PM
Updated : 31 July 2019, 06:42 PM

বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব-এর উদ্যোগে বুধবার ‘ডেঙ্গু রোগ, বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এই পরামর্শ দেন।

ডেঙ্গুর প্রকোপ ও অনেক জেলায় বন্যার ভোগান্তির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরে থাকারও সমালোচনা করেছেন তিনি।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমি সরকারকে বলতে চাই, এই ডেঙ্গুর ব্যাপারে জরুরি একটা ব্যবস্থা, আইন বলেন আর যাই বলেন ‘জরুরি ব্যবস্থা’ নেওয়া উচিত। জরুরি ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে কতগুলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে ডেঙ্গু সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং সরকারি-বেসরকারি সকল চিকিৎসককে সেখানে ব্যবহার করে এটার ব্যবস্থা নেওয়া হোক অযথা জনগণকে আতঙ্কিত না করে।”

ঢাকায় ডেঙ্গুর বিস্তারে যখন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, সেই সময় এই পরামর্শ দিলেন চারদলীয় জোট সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা এই বিএনপি নেতা।

ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে দ্রুত কার্যকর ওষুধ আমদানি করে যেসব জায়গায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা উৎপন্ন হয়, সে জায়গাগুলোতে ছিটানোর ব্যবস্থা করার পরামর্শও দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কেউ যাতে ব্যবসা না করে সেই আহ্বানও রেখেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

“আমি সকলকে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছি, অতি দ্রুত কার্যকর ওষুধ আনার আহ্বান জানাচ্ছি, ডেঙ্গু সেন্টার নামে কতগুলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং সেখানে চিকিৎসা খরচ ও পরীক্ষা খরচ নিদিষ্ট করে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

ডেঙ্গুর পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি যারা মানছে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।

সরকারের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই সরকার যে কোনো ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্য এটা গুজব বলে। দেশে যে ৩০ তারিখে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেটা ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি হয়েছে, তারা (সরকার) কোথাও বলেছে, এটা গুজব। এই যে বন্যা হয়েছে -এটা কি গুজব? গণপিটুনিতে মানুষ মারা যাচ্ছে-এটা কি গুজব? দিন দুপুরে হত্যাকাণ্ড- এটা কি গুজব? এই যে দেশে সকল ব্যাপারে আমাদের সমাজে পচন লেগেছে- এটা কি গুজব? শিশু ধর্ষিত হচ্ছে এটাও কি গুজব? এসব গুজব নয়।

“এই গুলো হল এই সরকারের ব্যর্থতা। তারা যেহেতু নির্বাচিত সরকার নয়, জনগণের সরকার নয়, জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।”

হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার জন্য এর দায়-দায়িত্ব নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ দুই মেয়রের পদত্যাগ এবং সরকাররের এ সব ব্যর্থতা মেনে নিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

ডেঙ্গু নির্মূলে ‘সফল হওয়ার’ নজির হিসেবে ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বিনা কারণে লন্ডনে। যে বন্যা ও ডেঙ্গুর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যদি গণতান্ত্রিক সরকারের কোনো প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে অবস্থান করতে পারতেন না।

“আমরা অতীতে দেখেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি কোনো দুর্যোগের সময়ে সরকারি সফরেও বিদেশে গিয়েছেন সেই সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেছেন। অথচ আজকে প্রধানমন্ত্রী দেশে নেই, আজকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও দেশে নাই।”

“আজকে দুই মেয়র অতিকথন করে, জিনিসটা নিয়ন্ত্রণ না করে তারা আজকে ব্যর্থ হওয়ার পরে এ্রখন আর মিডিয়ার সামনে আসতে চান না।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই সভায় ডেঙ্গু জ্বর ও এতে করণীয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক একেএম আমিনুল হক।

আলোচনা সভার পর ডেঙ্গু রোগে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য শোভাযাত্রা ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কাদের গনি চৌধুরী, শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের জ্যেষ্ঠ নেতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, ডা. মো. আবদুস সেলিম, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. জহিরুল ইসলাম সাকিল বক্তব্য রাখেন।