বানভাসী মানুষকে বাঁচাতে ‘জাতীয় সংলাপ’ চান কামাল হোসেন

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বানভাসী মানুষকে বাঁচাতে ‘জাতীয় সংলাপের’ প্রস্তাব করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2019, 03:19 PM
Updated : 22 July 2019, 03:19 PM

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বন্যা মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা আছে, আমাদেরও ভূমিকা আছে। এককভাবে সরকারের পক্ষে এটা মোকাবিলা সম্ভব না। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন অবশ্যই একটা জাতীয় সংলাপ অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। দ্রুত জাতীয় সংলাপ হোক। ”

সরকারের উদ্দেশে কামাল বলেন, “আসুন- বন্যার আক্রমণ, বন্যা কেন হয়, কীভাবে মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচানো যায়, সে বিষয়গুলো আমরা মূল্যায়ন করি, ঘাটতিগুলো পূরণ করার ব্যাপারে কীভাবে এগোতে হবে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করি। এসব করতে জাতীয় সংলাপ করুন।”

গণফোরামের জোটসঙ্গী বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বন্যা মোকাবিলায় ‘চরম উদাসীনতা’ দেখিয়ে আসছে। তারা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারছে না।

আর কামাল বলছেন, কিছু কিছু বিষয় জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে হয়; বন্যা সেরকমই একটি বিষয়, যেখানে দলীয় সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে সবাই মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

“সরকারের দায়িত্ব থাকে নাগরিকদের টেনে তাদের কাছ থেকে যেটা পাওয়ার কথা সেটা আদায় করা, তথ্য আদায় করা, তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। যেটাকে বলে যে, সবাই মিলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। এটা করা লাগে, এটা করা হচ্ছে না।”

তিনি অভিযোগ করেন, দেশে ‘কার্য্কর গণতন্ত্র’ না থাকায়, দেশ শাসন করার ব্যাপারে ‘নাগরিকদের ভূমিকা’ না থাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যাচ্ছে না।

“আমরা মনে করি, জনগণের আরও সক্রিয়ভাবে দেশের ব্যাপারে এগিয়ে আসা দরকার, সংগঠিত হওয়া দরকার।”

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে

কামাল হোসেন বন্যা মোকাবিলায় জাতীয় সংলাপের কথা বললেও তার নেতৃত্বে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো উদ্যোগ কেন দেখা যাচ্ছে না- সেই প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে করেন এক সাংবাদিক।

উত্তরে জোটের শীর্ষ নেতা কামাল বলেন, “ওইটা তো একটা নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হয়েছিল। এ বিষয়ে (বন্যা) আমি মনে করি- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নয়, জনগণের আসল ঐক্য প্রয়োজন। এখানে কয়েক দলের ঐক্য নয়, সকল দল ও জনগণের ঐক্যকে আমি গুরুত্ব বেশি দিতে চাই। সবাইকে মিলে করতে হবে।”

বর্তমান সময়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কার্যকর আছে কি নেই- সেই প্রশ্নে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “দেখুন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে নির্বাচন সামনে রেখে। মূল লক্ষ্য রেখে সেই ফ্রন্ট হয়েছিল। সেই মূল লক্ষ্য তো আমাদের থাকবেই।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণফোরামের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বন্যা মোকাবিলায় ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

দাবিগুলো হল- অবিলম্বে বন্যা দুর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সরবারহ, জনগণের কার্য্কর অংশগ্রহণপূর্বক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিদতার ভিত্তিতে রিলিফ কমিটি গঠন করে ত্রাণ তৎপরতা চালানো, চরাঞ্চলে দ্রুত ত্রাণ বিতরণ ও পূনর্বাসনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, চিলমারী, রাজীবপুর, রৌমারি এলাকাসহ অধিকতর বন্যা আক্রান্ত উপজেলাকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করা এবং ভারত-নেপাল-ভুটান ও প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে মিলে কার্য্কর আঞ্চলিক উদ্যোগ নিয়ে পানি সমস্যার সমাধান, নদী ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পিত বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মহসিন রশিদ, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসেন, আমিন আহমেদ আফসারী, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।