এরশাদের ‘বাস্তবতা’ কীভাবে অস্বীকার করব: ওবায়দুল কাদের

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের গাঁটছড়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় সংসদে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর তার দলের যে অবস্থান, তাকে তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2019, 03:29 PM
Updated : 19 July 2019, 03:29 PM

শুক্রবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, স্বৈরাচার হিসেবে পতন হলেও এরশাদ জনগণের ভোটে জিতে সংসদে গেছেন, তার দল সংসদের বিরোধী দল হয়েছে। 

“এখন পার্লামেন্টে ইলেকটেড যে মেম্বার, আমি তার অস্তিত্বকে, এবং অস্তিত্বের বাস্তবতাকে কীভাবে অস্বীকার করব!”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদের তেমনটা ভাবছেন না।

তার বিশ্বাস, ‘সময়োপযোগী রাজনীতি’ করতে পারলে এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিরও টিকে যেতে সমস্যা হবে না।

সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব থেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় উঠে আসা এরশাদ নয় বছর দেশ শাসনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে বিএনপি, আর সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে দুর্নীতির দায়ে যেতে হয় জেলে।

পরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ১৯৯৭ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান এরশাদ; ‘পতিত স্বৈরাচার’ তকমা নিয়েও তিনি ঠিকই টিকে যান বাংলাদেশের রাজনীতিতে। 

২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয় এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলে জাতীয় পার্টি হয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল। স্ত্রী রওশন এরশাদকে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসিয়ে এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে এরশাদ নিজেই প্রধান বিরোধী দলের নেতার পদ নেন। ওই পদে থাকা অবস্থায় গত ১৪ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

প্রয়াত এইচ এম এরশাদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বরিশালে এক জনসভায় বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে আপস করে, তাদের সঙ্গে জোট করে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে।”

শুক্রবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সমালোচনার বিষয়ে কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক।

উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বাস্তবতা হল এটা- পৃথিবীতে অনেক স্বৈরাচার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নি কিন্তু এরশাদ সাহেব যখনই বিদায় নিয়েছেন,… পতনের পরপরই তিনি পাঁচটি আসনে দাঁড়িয়ে পাঁচ আসনেই জিতেছেন।”

সংসদে এরশাদ ও তার দলের ‘অস্তিত্বের বাস্তবতাকে’ অস্বীকার করার উপায় নেই মন্তব্য করে কাদের বলেন, “এরশাদের দল সংসদে ৩০-৪০ সিট নিয়ে আছে, পার্লামেন্টে তাদের একটা রোল থাকে, বিরোধী দলের ভূমিকা তারা রাখছে। এই অবস্থায় জনগণের প্রতিনিধিকে আমি কীভাবে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করব!”

বিএনপি যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই জিয়াউর রহমান কীভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিলেন সে কথাও স্মরণ করতে বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

নিজের ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টায় জিয়াউর রহমানের গণভোটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন বলেন, “তারা (বিএনপি নেতারা) যে এখন বলে, একশ পার্সেন্ট ভোট আবিস্কার করেছেন। একশ পার্সেন্ট ভোট যদি অস্বাভাবিক হয়, একশ চৌদ্দ পার্সেন্ট ভোট কি ধরনের অস্বাভাবিক?

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, “আগে নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন, আয়নায় নিজেদের চেহারাটা দেখুন।”

এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত কী হবে- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক পরিস্থিতি কী রূপ নেবে- সেটা জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তারা ভুল করলে ভুলের মাশুল দিতে হবে।

“আজকে শুনতে পাচ্ছি তারা যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনা করবে। সব কিছু তাদের নিজেদের ব্যপার, নিজেদের সিদ্ধান্ত। আমরা সব সময়ই বলি, রাজনীতিতে তারাই টিকে থাকবে, যারা সময়োপযোগী রাজনীতি খুঁজে নিতে পারবে। যুগের দাবির রাজনীতিকে যারা আলিঙ্গন করবে, তাদের হারিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।”

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।