দলীয় কার্যালয়ে এরশাদকে নেতাকর্মীদের অশ্রুভেজা বিদায়

ফুলেল শ্রদ্ধা আর চোখের জলে দলীয় কার্যালয়ে প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে শেষ বিদায় জানালেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2019, 01:19 PM
Updated : 15 July 2019, 01:29 PM

সোমবার জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বেলা ১২ টায় এরশাদের মরদেহ বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী নাসরীন জাহান রত্না, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আদেলুর রহমান আদেল, সাঈদুর রহমান টেপা, আলমগীর শিকদার লোটন,শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জাপার সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল আলম রুবেল, দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ নোমান এসেছিলেন শ্রদ্ধা নিবেদনে।

জাসদ (রব) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন এরশাদের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রয়াত চেয়ারম্যানকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা কুমিল্লা মুরাদনগর আন্দিকোট ইউনিয়নের জাপা সভাপতি আবুল কালাম বলেন, “৪০ বছর ধরে জাপার রাজনীতি করি, স্যারকে কখনও কাছ থেকে দেখিনি। আজ এমন দেখা হবে, কে জানত।”

জাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য নজরুল ইসলাম এসেছেন পিরোজপুর থেকে।

তিনি বলেন, “তিন মাস আগে দেখা হয়েছিল৷ তিনি সবসময় বলতেন, তোমরা শান্ত থেকো। আমরা ফের ক্ষমতায় যেতে পারি, এ কথা বিশ্বাস করতেন। ধৈর্য্য রাখতে বলেছিলেন।”

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার একটি ওয়ার্ডের সেক্রেটারি মোকসুদুর রহমান বলেন, “স্যার তো আমাদের উত্তরবঙ্গের সন্তান। অসুস্থ অবস্থাতে স্যার রংপুর গিয়েছিলেন, সেখানেই তাকে শেষ দেখা।”

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, “গত বৃহস্পতিবার স্যারকে দেখতে গিয়েছিলাম সিএমএইচে।  স্যার চলে যাবেন, জানতাম। কিন্তু মন তো মানছে না।”

জাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা রহমান মুন্নী বলেন, “স্যার চলে যাওয়ার আগের ১৫ দিন আমরা সিএমএইচে ছিলাম, বাড়ি যাইনি৷ স্যারকে আজ আমরা সত্যি হারিয়ে ফেললাম।”

এরশাদকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে দলের নারী নেত্রীরা ভেঙে পড়েন কান্নায়।

রিতু নূর বলেন, “স্যার ছিলেন আমাদের রাজনৈতিক পিতা। সামনের দিনগুলোতে তাকে ছাড়া পথ চলতে হবে, এ কথা সত্য। কিন্তু তার হাত নেই আমাদের মাথার ওপরে।”

জাতীয় মহিলা পার্টির সৈয়দা পারভিন তারেক বলেন, “তিনি সত্যি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আপদে, বিপদে কার কাছে যাব?”

সরকারি কর্মকর্তা গোলাম কায়কোবাদ বলেন, “এত বড় এক নেতা ছিলেন তিনি৷ তাকে শেষবারের মতো দেখতে এসেছি।”

গাড়িচালক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “এতগুলো বছর প্রেসিডেন্ট আছিলেন, কত বড় নেতা। তারে শেষবারের মতন দেখতে আসছি।”

জাপা কার্যালয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনপর্ব শেষে পরে বিকালে এরশাদের মরদেহ নেওয়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। সেখানে বাদ আসর তার তৃতীয় জানাজা হয়। 

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহও।

জানাজার আগে এরশাদের শাসনামলের সময় নেওয়া নানা কর্মকাণ্ড সংক্ষেপে তুলে ধরেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

জিএম কাদের বলেন, “বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল জীবন ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের।  দেশ, জাতি, সমাজের জন্য তার অনেক অবদান রয়েছে৷  মানুষ ভুল, ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। তার যদি কোনো ভুল ত্রুটি থেকে থাকে, কারও মনে আঘাত দিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে মাফ করে দেবেন।”

এরশাদের তৃতীয় জানাজা পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মিজানুর রহমান। 

জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে।

মঙ্গলবার সকালে এরশাদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজের এলাকা রংপুরে। সেখানে চতুর্থ জানাজার পর মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে বিকালে সেনানিবাস কবরস্থানে দাফন করা হবে এরশাদকে।