নেতাকর্মীদের প্রতি বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান বিএনপির

বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 05:13 PM
Updated : 13 July 2019, 05:20 PM

শনিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

তিনি বলেন, “অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে ছেড়ে দেওয়া পানির ফলে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে সেই বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে বন্যাপীড়িত দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের সর্বস্তরেরে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিএনপি মহাসচিব জানান, বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটিকে সক্রিয় করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ‘সরকার ব্যর্থ’

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার ‘সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, চীনে প্রধানমন্ত্রী গেলে সেখান থেকে একটা ইতিবাচক কোনো জবাব পাব- সেটাও আমরা দেখতে পারছি না। আমরা বরঞ্চ দেখলাম যে, চীন তার একই অবস্থানেই আছে এবং সেখানে কোনো স্পষ্ট কিছু কোনো কথা চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা পাইনি।

“এ বিষয়ে আমরা কূটনীতিকদের ব্রিফ করব এবং তার আগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাব।”

ব্যাংকিং ব্যবস্থা ‘ভেঙে পড়েছে’

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) অবসায়নের সিদ্ধান্তকে ‘নজিরবিহীন’ বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।   

“আমরা মনে করি, এ বিষয়টি গোটা ব্যাংকিং সিস্টেমের একটা প্রতিকী ঘটনা। এইভাবে গোটা ব্যাংকিং সিস্টেম ভেঙে পড়েছে।”

পিপলস লিজিং ফাইন্যান্সের ঘটনার সমালোচনার কারণ ব্যাখ্যা করে ফখরুল বলেন, “আমানতকারীদের ২৩৬ কোটি টাকা ফেরত না দিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে অবসায়ন করেছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমানতকারীরা চরম অনিশ্চয়তা মধ্যে পড়েছে।”

অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা এবং আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পুঁজিবাজারের আমানতকারীসহ ব্যাংক ব্যবস্থার ‘বেহাল অবস্থা’ নিয়ে ভবিষ্যতে দলীয় কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ‘শিগগিরই’ শুরু হবে।

“আমাদের ১৮ তারিখে বরিশালে, ২০ তারিখ চট্টগ্রাম ও ২৫ তারিখ খুলনায় সমাবেশ এখন পর্যন্ত কনফার্ম করেছি। আমরা আশা করছি যে, আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে বাকী বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করতে পারব। ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়ে নিয়েছি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ রয়েছেন এবং চিকিৎসার জন্য এখন হাসপাতালে রয়েছেন। কিন্তু আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, তার স্বাস্থ্যের কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। তার শারীরিক যেসব সমস্যা ছিল তার কোনো সমাধানই হয়নি, উপরন্তু সমস্যা বেড়েই চলেছে।

“সেই কারণে আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।”

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জন্য বৈঠকে ফোল্ডার

 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। বৈঠকের একদিন আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্বলিত কাগজপত্রসহ একটি ফোল্ডার বিশেষ বার্তা প্রেরকের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। দলীয় মনোগ্রাম সম্বলিত ওই ফোল্ডারের ভেতরে সব কাগজপত্র দেওয়া হচ্ছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দায়িত্বে আসার পর নতুন এই নিয়ম চালু হল। শনিবারের বৈঠকে সব সদস্যই ফোল্ডার হাতে নিয়ে বৈঠকস্থলে ঢোকেন।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপেতে এই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।

বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।