‘সাহেবে’ আপত্তি হারুনের

সংসদে ‘সাহেব’ বলে সম্বোধন করায় আপত্তি জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2019, 05:46 PM
Updated : 9 July 2019, 05:46 PM

মঙ্গলবার এ বিষয়ে তিনি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময়ে স্পিকারের আসনে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে হারুনুর রশিদ সংসদের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, “সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ৩০৭ ধারা অনুযায়ী সংসদে কারও বিরুদ্ধে অমর্যাদাকর বা সম্মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া যাবে না। দেওয়া হলে সেটা এক্সপাঞ্জ হবে।

“আমি একজন সংসদ সদস্যকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করায় স্পিকার বলেছেন ‘ভাই’ বলা যাবে না। ‘মাননীয় সংসদ সদস্য’ বলতে হবে। সেটা এক্সপাঞ্জ হয়েছে। কিন্তু লক্ষ করেছি, কোনো কোনো সদস্য আমাকে ‘মাননীয় সংসদ সদস্য’ না বলে ‘হারুন সাহেব’ বলে থাকেন।”

“আপনি দয়া করে এই শব্দ এক্সপাঞ্জ করবেন,” ডেপুটি স্পিকারের উদ্দেশে বলেন হারুন।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ

বিএনপির এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, “এই সংসদে অনেক সময়ে অন্যদের সম্মানহানি করে বক্তব্য দেওয়া হয়। যেমন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ বলা হয়। অথচ তিনি খুনি নন। খালেদা জিয়াকে ‘অর্থ আত্মসাতকারী’ আর তারেক রহমান ‘খুনি’ বলে অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। আপনি এসব শব্দ এক্সপাঞ্জ করবেন।”

এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা হট্টগোল শুরু করলে হারুনুর রশীদের মাইক থামিয়ে দিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, “আপনি একটু আগে শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলেছেন। এখন আপনি নিজের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।”

এদিন সংসদে বক্তব্যে জাসদ সভাপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক ট্রাইব্যুনালে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দেওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা ছাড়াও জিয়ার সময়ে আরও অনেক হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সেহেতু একটি কমিশন করে এর তদন্ত করা উচিত। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ৭৭ সালের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠন করুন।”

 ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে ইনু বলেন, “সেই মিথ্যা মামলায় আমিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক কর্মকর্তা সাজাপ্রাপ্ত হন। আমাদের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও শেখ জাকির হোসেন ২০১১ সালের ২২ মার্চ একটি রায় দেন। রায়ের দুটি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

“ওই রায়ে বলা হয়েছে, ৭৬ সালের সামরিক ট্রাইব্যুনাল অবৈধ। বিচার ও দণ্ড প্রদান উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাহেরের ফাঁসি অবশ্যই বিচার বহির্ভূত খুন ও নিন্দনীয়।

“রায়ে তাহেরকে শহীদ হিসেবে গণ্য করে তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দানের নির্দেশ দেওয়া হয়। যারা চাকরিতে ছিলেন তাদের স্বাভাবিক অবসরের দিন পর্যন্ত ওই পদে আছেন বলে গণ্য করে তাদের সকল বকেয়া বেতন, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা রায় প্রদানের ১৮০ দিনের মধ্যে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হযনি। এটা কার্যকর করার জন্য আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

এরপর ডেপুটি স্পিকার বলেন, “আদালতের নির্দেশের পর আপনাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কোনো আবেদন এসেছিল কি না? না এসে থাকলে সরকারের পক্ষে আমলে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে এখনও সময় আছে। কিন্তু পয়েন্ট অব অর্ডারের ভিত্তিতে এ বিষয়টি আমলে নেওয়ার সুযোগ সংসদের নেই। বিষয়টি আপনাদের আইনগতভাবেই নিষ্পত্তি করতে হবে।”