নির্যাতন এখন বড় হাতিয়ার: ফখরুল

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিরোধীদের দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে এখন নির্যাতনকে হাতিয়ার করেছে ক্ষমতাসীনরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2019, 07:49 PM
Updated : 26 June 2019, 07:49 PM

ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বুধবার বিএনপির উদ্যোগে নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস-২০১৯ উপলক্ষে ‘নিরবতাও নির্যাতনের কারণ হতে পারে’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

গত এক দশকের চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এক যুগেরও উপরে অত্যন্ত সুপরিকল্পতভাবে সচেতনভাবে জনগণের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছে। উদ্দেশ্য একটিই, ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করে রাখা, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী করা। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য এই নির্যাতনকে বড় হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।”

আলোচনার শুরুতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রাইট টু লাইভ’ উপস্থাপন করা হয়। মানবাধিকার ডেস্কের প্রতিবেদন তুলে ধরেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী।

গত বছর নির্যাতিত নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পারুল বেগম, সিরাজগঞ্জের মেরিনা মেরী, ময়মনসিংহের নুরুজ্জামান চাঁন, রাজশাহীর দুর্গাপুরের মোশতাক আহমেদ, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইয়াসিন, ঢাকার আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, আকরাম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম বর্তমান সরকার আমলে তাদের উপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

নরসিংদীর তানজিরুল হক লিমনকে হুইল চেয়ারে অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসার পর তার অবস্থা তুলে ধরেন তার মা মমতাজ বেগম।

ফখরুল বলেন, “গত ১২/১৩ বছর ধরে এই দেশে যা চলছে, আমার মনে হয় সাম্প্রতিককালে বিশ্বে এই ধরনের নির্যাতন নজিরবিহীন। আপনারা নির্যাতিতদের ‍মুখে শুনেছেন। এখানে বসে আছেন আমাদের ভাই-বোনেরা। ওই কোনায় এক বোন বসে আছেন, যিনি নির্বাচনের পূর্বে একটা দলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তার চোখ দুটি চলে গেছে। এখানে এক বোন কথা বলেছেন, তার সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছে। অসংখ্য অসংখ্য চিত্র।”

বর্তমান অবস্থা বদলাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই যে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করব।”

খালেদার মুক্তি ‘শিগগিরিই’

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার ইনশাল্লাহ মুক্তি হবে। আমি গত সপ্তাহে বলেছিলাম, এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে দুইটার জামিন হয়েছে।

“আরও দুটি জামিনের অপেক্ষায় আছি। আমি আশা করছি, তিনি খুব শিগগিরই আবার আমাদের মাঝে জামিনের মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসবেন এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন।”

ফখরুল বলেন, “আমাদের প্রধান দাবি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর পরের দাবি হচ্ছে, অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ বলে আমরা মনে করি। আমরা আহ্বান জানাই, অবিলম্বে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের ত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ বলেন, “আমরা পিছিয়ে থাকব না, আমরা পিছিয়ে পড়ব না, যতই অত্যাচার-নির্যাতন হোক। এত নিপীড়ন-নির্যাতনের পরও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভবপর হবে না।”

দলের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং ফারজানা শারমিন, জাহেদুল আলম হিটো ও জুয়েল মন্ডলের পরিচালনায় এই আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শামীমুর রহমান শামীম, হারুনুর রশীদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মীর হেলালউদ্দিন, কাজী আবুল বাশার, আনোয়ার হোসেইন, মোরতাজুল করীম বাদরু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, আবুল কালাম আজাদ, শাহ নেছারুল হক, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, ইউএনডিপিসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।