কামাল ‘খেলেছেন’ আওয়ামী লীগের পক্ষে: নাসিম

বিএনপির সঙ্গে জোট গড়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির অন্যতম নীতি-নির্ধারক মোহাম্মদ নাসিম।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2019, 02:41 PM
Updated : 25 June 2019, 03:13 PM

মঙ্গলবার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বলেন, “তিনি (কামাল) আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে মাঠ খালি করে দিলেন, আর আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। এই হচ্ছে তাদের (বিএনপির) ভাড়াটের মুরোদ। ওরা কামাল হোসেনকে ভাড়া করল ওদের জন্য, আর কাজ করল আমাদের জন্য।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে।

এরপর বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়ার পর নির্বাচনেও আসে। ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে প্রত্যাখ্যানের পর গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরাই আগে এমপি হিসেবে শপথ নেন, পরে বিএনপিও তাদের পথ ধরে।

আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতা কামালের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার ক্ষোভের কথা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমেও এসেছে।

এর মধ্যেই গত রোববার সংসদে দাঁড়িয়ে এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ বলেছিলেন, ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সহযোগিতা করতেই তিনি কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগ দেন।

সুলতান মনসুর ওই কথা বলার দুদিন পরই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের বক্তব্য এল।

কামাল হোসেন (ফাইল ছবি)

নাসিম বিএনপির রাজনৈতিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “২০১৮ সালে নির্বাচন এল, লোক ভাড়া করল। কাকে করল? আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত নেতা, অত্যন্ত শিক্ষিত ও বিদগ্ধ নেতা।

“আওয়ামী লীগে চক্রান্ত করে ব্যর্থ কামাল হোসেনকে ভাড়া করে সামনে দাঁড় করালো। বলেন, তাকে নিয়ে জিততে পারবে? পারবে না। সমস্ত মাঠ খালি হলে গেল, আমার নিজের এলাকায়ও তাদের খুঁজে পাইনি।”

“খেলা যদি ফাঁকা মাঠে হয়, কী করব? ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। তারা মাঝপথ থেকে পালিয়ে গেল। এভাবে আমরা বার বার গোল দেব ইনশাল্লাহ,” বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় বিএনপি। আর গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন।

বিএনপির উদ্দেশে নাসিম বলেন, “কৌশলে হেরে গেছেন। আমাদের কাছে বার বার হেরে গেছেন। ভোটে নেমে মাঠ থেকে পালিয়ে গেলেন। আপনাদের দিয়ে কিছু হবে না। আপনারা খেলতেও জানেন না। খেলা পরিচালনাও করতে জানেন না।”

বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, “আন্দোলন করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। প্রেস ব্রিফিংয়ে মধ্যে পড়ে আছেন আপনারা। আপনারা মাঠে নামতে জানেন না। বললেন পার্লামেন্টে আসবেন না, অবৈধ পার্লামেন্ট। অবৈধ পার্লামেন্টে আজ বৈধ হয়ে বসে আছেন!“

আমলাদের নিয়ে সতর্কতা নাসিমের

বাজেট বাস্তবায়নে আমলাদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

তিনি বলেন, “আমরা প্রতি বছরই বিশাল বাজেট করছি। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। ভারত বা ভিয়েতনামে যদি শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন হয়, তাহলে আমাদের এখানে হবে না কেন?

মোহাম্মদ নাসিম (ফাইল ছবি)

“বাজেট বাস্তবায়িত না হওয়ার অন্তরায়গুলো বলতে চাই। যে যত বড় আমলা, সে তত ফাইল আটকে রাখে। যে যত ফাইল আটকায়, সে তত বড় আমলা। এই আমলাতন্ত্র আমাদের জন্য একটা সমস্যা। আমলাদের মধ্যে কিছু আছেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে বিব্রত ও ব্যর্থ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।”

বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আমলারা তৎপর বলে দাবি করেন নাসিম।

“ব্যাংকিং সেক্টর আর সচিবালয় বলেন, সর্বত্রই শেকড় গেঁড়ে জামাত-শিবির বসে আছে। তারা সব সময় চেয়েছে আওয়ামী লীগ যেন ব্যর্থ হয়, শেখ হাসিনার সরকার যেন ব্যর্থ হয়। একটি ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়।”

নাসিম বলেন, “ব্যাংক সেক্টর নিয়ে কথা উঠছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হল, তাদের কেন ছাড় দেওয়া হল? ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কৃষকরা ১/২ হাজার টাকার জন্য সার্টিফিকেট মামলার আসামি হবে আর ঋণ খেলাপিরা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেবে এটা কেন হবে?“

তিনি বলেন, “কিছু ব্যবসায়ী আছেন তারা ব্যাংকের মালিক। গার্মেন্টস, ওষুধ কোম্পানি এমন কি সংবাদপত্রেরও মালিক। এই ধরনের বহুমুখী ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আছে। তারা সব ব্যাপারে এক্সপার্ট। তারা সরকারি দলে ঢুকে আছে। এই সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা আমাদের বন্ধু হতে পারে না।

“সংসদ হবে রাজনৈতিক নেতাদের। যারা ব্যবসায়ী, কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। কোনোদিন মাঠের রাজনীতি করেনি। এরা সুখের পায়রা। এদের সবাইকে আমরা চিনি।”

সুবিধাবাদীদের নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে নাসিম বলেন, “দুঃসময়ে এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে ভোল বদল করেছিল। ২০০১ সালের পর এদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

“এরা কী করে পত্রিকার মালিক হয়? আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে লাইসেন্স নিয়ে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা সংবাদপত্রের মালিক হয়ে দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। এর ওদিকেও সুবিধা নেয়, এদিকেও সুবিধা নেয়। এদের চিহ্নিত করার সময় এসে গেছে।”