আওয়ামী লীগের আচরণ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না: রাঙ্গাঁ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এখনকার আচরণ ‘মেনে নেওয়া যাচ্ছে না‘ বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2019, 12:25 PM
Updated : 25 June 2019, 12:25 PM

তিনি বলেছেন, “প্রতিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের পাশে থেকে নির্বাচন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পেয়ে জাতীয় পার্টির সাথে যে আচরণ করেছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।”

মঙ্গলবার ঢাকার মতিঝিলে জাতীয় পার্টির রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভাগীয় সম্মেলনে একথা বলেন রাঙ্গাঁ।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট গড়ে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। এরপর বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে অংশে নিলেও তাদের সমঝোতা দেখা গেছে।

ভোটের পর সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারেও জায়গা পায় জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও করা হয়।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি আসার পর আসন সমঝোতা করে ভোটে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। কিন্তু এবার সরকারে জাতীয় পার্টিকে নেয়নি আওয়ামী লীগ, অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদের বসতে হয়েছে সংসদে বিরোধী দলের আসনে।

এর মধ্যে গত সোমবার অনুষ্ঠিত বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। এ কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরকে হারতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

রাঙ্গাঁ বলেন, “প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। গতকালের বগুড়ার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জয়ের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সরকারি দল।”

জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগেরই প্রয়োজন বলে মনে করেন দলটির মহাসচিব।

তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি শক্তিশালী ছিল বলেই আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সাথে হাত মিলিয়েছে।”

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দিলে তাতে ক্ষোভ দেখা দেয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া জাপার বিভাগীয় সম্মেলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আসন বণ্টন ইস্যুতে ক্ষোভ জানাতে থাকেন। তাদের অনেকে আসন কমে যাওয়ার জন্য মহাসচিব রাঙ্গাঁর ব্যর্থতাকেও দায়ী করতে থাকেন।

মঙ্গলবারের সভায় রাঙ্গাঁ তাদের উদ্দেশে বলেন, “জাতীয় পার্টির ৫৭টি আসন পাওয়ার কথা ছিল। মাত্র ২২টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ।”

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই লোভের কাছে মাথা নত করেনি, তাই জাতীয় পার্টিকে দালাল বলা যাবে না। বরং আওয়ামী লীগই দালাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।“

রাঙ্গাঁ সভায় বলেন, “আওয়ামী লীগে এখন ৫টি ভাগ, বিএনপিতে ৪ ভাগ, কিন্তু জাতীয় পার্টি এক ভাগ আছে। জাতীয় পার্টিতে কোনো কোন্দল বা দ্বন্দ্ব নেই। কোনো বিভেদ নেই জাতীয় পার্টিতে।”

১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের মুখে সামরিক শাসক এরশাদের পতনের জাতীয় পার্টিতে নিয়মিতই ভাঙন দেখা গেছে। ১৯৯৬ সালে দলের তৎকালীন মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি (জেপি),  ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তখনকার মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জু বিজেপি গঠন করেন। পরে এম এ মতিন ও কাজী জাফর আহমেদও দল ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন।

এদের মধ্যে জেপি এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে রয়েছে। বিজেপি কিছুদিন আগে বিএনপি জোট ছাড়লেও প্রয়াত কাজী জাফরের জাতীয় পার্টি এখনও ওই জোটে রয়েছে।

রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলেও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  জি এম কাদের মনে করেন, জোটের প্রয়োজন রয়েছে।

মঙ্গলবারের সভা শেষে তিনি বলেন, “জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন না করলে বাংলাদেশে ভালো ফলাফল করা যাচ্ছে না। প্রতিটি দলই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে। কিন্তু বড় দলগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হলে ছোট দলগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তাই জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে পারলে, আমরা আমাদের স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতিতে একটি জোটের নেতৃত্ব দিতে পারব। “

জাতীয় পার্টি তৃণমূলে দলকে গুছিয়ে নিতে সারা দেশে আটটি বিভাগীয় কমিটি গঠন করবে, যার নেতৃত্বে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা থাকবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন জি এম কাদের।