ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা: খন্দকার মোশাররফ

সংসদে শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশের পর তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা জানতে চেয়েছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2019, 03:02 PM
Updated : 23 June 2019, 03:02 PM

ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশের পরদিন রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, গতকাল শনিবার সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে তিনশ ঋণ খেলাপির নাম… ৫১ হাজার কোটি টাকা, এসব জনগণের টাকা, জনগণের আমানত।

“যারা এইভাবে খেলাপি করে করে কৌশলে এসব টাকা বিদেশে পাচার করে, এদেশের জনগণের পকেট খালি করে, ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে যাচ্ছে, সেই খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেন- এটা আমরা দেখতে চাই।”

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “ব্যাংকের যদি নিয়ম-কানুন, শৃঙ্খলা থাকত, ব্যাংকগুলো যদি দলীয়করণ করা না হত, ব্যাংকগুলো যদি কৌশল করে দখল করে আওয়ামী লীগের নেতাদের সেখানে বসানো না হলে তাহলে এত ঋণখেলাপি হওয়ার কথা না।

“আপনি ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন পরের বছর কী করতে হবে সেগুলো ব্যাংকের আইনে আছে। কেন এগুলো বাস্তবায়ন করা হল না? যদি বাস্তবায়ন হত তাহলে আজকে ৫১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার কথা না।”

শনিবার সংসদে প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকা উপস্থাপন করেন। এই শীর্ষ ৩০০ খেলাপির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা আছে ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।

২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া ১৪ হাজার ৬১৭ জনের বড় একটি অংশ ঋণ খেলাপি, যাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।

শীর্ষ ১০ ঋণ খেলাপির মধ্যে আছে- চট্টগ্রামের সামানাজ সুপার অয়েল (এক হাজার ৪৯ কোটি টাকা), গাজীপুরের গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং (৯৮৪ কোটি), ঢাকা সাভারের রিমেক্স ফুটওয়্যার (৯৭৬ কোটি), ঢাকার কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম (৮২৮ কোটি), চট্টগ্রামের মাহিন এন্টারপ্রাইজ (৮২৫ কোটি), ঢাকার রূপালী কম্পোজিট (৭৯৮ কোটি), ঢাকার ক্রিসেন্ট লেদার ওয়্যার (৭৭৬ কোটি), চট্টগ্রামের এস এ অয়েল রিফাইনারি (৭০৭ কোটি), গাজীপুরের সুপ্রভ কম্পোজিট নিট (৬১০ কোটি), গ্রামীণ শক্তি (৬০১ কোটি)।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতি, আয়-ব্যয়ের ঘাটতি, ঋণ পরিস্থিতি, সাধারণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর করারোপের সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, “এই বাজেট একটি সুযোগ-সুবিধাভোগীদের এবং অর্থনৈতিক অপশাসনের অস্বাভাবিক সরকারের অস্বাভাবিক বাজেট।

“সরকার জনগণের জন্য নয়, সুবিধাভোগীদের জন্য বাজেট করেছে। আয়ের বৈষম্য এত বেড়েছে যে, ধনী ও গরিবের মধ্যে বিশাল আকার ধারণ করেছে।”

জনগণের করের টাকায় সরকার ‘পোদ্দারি’ করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মোশাররফ।

তিনি বলেন, “উন্নয়ন হচ্ছে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট করে মেগা কমিশনের উন্নয়ন। সাধারণ মানুষের থেকে গ্যাসের বিল বাড়িয়ে, বিদ্যুতের বিল বাড়িয়ে, টেলিফোনে বিল বাড়িয়ে, ভ্যাট সম্প্রসারণ করে, ভ্যাটের মাধ্যমে একজন সর্বনিম্ন একদম প্রান্তিক গরিবকেও কিন্তু আজকে ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।

“অথচ বদনাম করে মানুষ ট্যাক্স দেয় না। জনগণের এই টাকাগুলোকে নিয়ে সরকার পোদ্দারি করে।”

সরকার দেশকে ‘গণতন্ত্রহীন’ করে রেখেছে অভিযোগ করে এই সংকট উত্তরণে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের উদ্যোগে ‘২৩ জুন পলাশী ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এহসানুল হক জসীম।

সংগঠনের সভাপতি সাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল করিম খান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।