‘৩৫-৩৬ থেকে ৩৭-৩৮ বছরের পার্থক্য কি খুব বেশি’

বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ছাত্র সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। তাদের তোপে মুখে পড়তে হল বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকেও।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2019, 10:41 AM
Updated : 22 June 2019, 10:46 AM

নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের নিচ তলায় শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা ছাত্রদলের নেতারা। সঙ্কটের আপাত সমাধান হিসেবে তারা আগের নিয়মেই স্বল্পকালীন একটি কমিটি গঠনের দাবি জানান।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বয়সসীমার শর্ত আরোপের বিরোধিতা করে তারা বলেন, একটি ‘সিন্ডিকেট’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ এই কাজটি করিয়েছে।

তাদের সংবাদ সম্মেলনের আগে ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি মিছিলে যোগ দিতে নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে নেমে তোপের মুখে পড়েন রিজভী।

রিজভী ওই মিছিল করে কার্যালয়ে ঢোকার পথে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে কার্যালয়ের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে পড়ে। পরে বিক্ষুব্ধদের কয়েকজন নেতা অন্যদের শান্ত করে রিজভীকে কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেন।

গত ৩ জুন ঈদের আগের দিন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। রিজভী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। তাতে আরও বলা হয়, ২০০০ সালের পর থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাবে।

এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা গত ১০ জুন নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কার্যালয়ের ভেতরে রিজভীকেও তারা অবরুদ্ধ করে রাখে।

সেদিন লন্ডনে থাকা তারেকের সঙ্গে কথা বলার পর বিক্ষুব্ধরা শান্ত হলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

তার মধ্যেই শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন তারা। এতে সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, সহসভাপতি এখতিয়ার রহমান কবির, সহসভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়জিদ আরেফিন, ওমর ফারুক মুন্নাসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদল করে যারা নেতৃত্ব পাওয়ার আশায় ছিলেন, এখন আকস্মিক সিদ্ধান্তে তাদের পদ পাওয়ার সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এর ফলে ছাত্রদলের আগের কমিটির সব সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদস্যরা বাদ পড়বেন। শুধু তাই নয়, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের ২৪ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ২১ জনও বাদ পড়বেন।

সাবেক সহসভাপতি তুহিন বলেন, “আমাদের অনেকেই ছাত্রদলের শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু একটা পরিচয় চায় যে, আমি এই সংগঠনের ওমুক পদে ছিলাম।”

তিনি তুহিন বলেন, “আমাদের মধ্যে বাদ পড়েছে সর্বোচ্চ ৩৮ বছরের নেতারা। এটাকে এখন ৪৭/৪৮ বছরের ‘বুড়ো’ নেতাদের আন্দোলন বলে চালানো হচ্ছে, এটা ঠিক না। এখন ৩৫/৩৬ বছরের কমিটি দেবে। বাদ পড়েছে ৩৮ বছরের নেতারা সহসভাপতি-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সহ সম্পাদকরা। শুধু ২ বছরের জন্য তারা যুক্ত হতে পারছে না।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০০ সালের এসএসসি পাস করা একজন ছাত্রের আনুমানিক বয়স ৩৫ বছর ধরা যেতে পারে। তার মাত্র ২/৩ বছর আগে ১৯৯৮/৯৭/৯৬ সালে পাস করা সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকরা যারা রয়েছেন, তারা যুক্ত হলে হবে ৩৭-৩৮ বছর।

“২০০০ সাল এসএসসি পাস ধরলে বয়স দাঁড়ায় ৩৫-৩৬ বছর। আমাদের প্রশ্ন ৩৫-৩৬ বছর দিয়ে কমিটি করলে কি সমালোচনা হবে না? নিয়মিত ছাত্রের বাইরে সিন্ডিকেটের দেওয়া ৩৫-৩৬ থেকে ৩৭-৩৮ এর পার্থক্য কি খুব বেশি?”

“এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে,” বলা হয় লিখিত বক্তব্যে।

তুহিন বলেন, “আমি মনে করি, সরকারের একটা এজেন্ট জড়িত এই সিন্ডিকেটের সাথে। তারা ছাত্রদলকে ধ্বংস করতে চায়। আমাদের শেষ জায়গা হচ্ছে দেশনায়ক তারেক রহমান। তার উদ্যোগ নেয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ আমরা দেখছি না।”

সিন্ডিকেট কারা আছে- প্রশ্ন করা হলে পাইলট বলেন, “একটা গানের কথা বলতে হয়। সব কথা বলে না হৃদয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। রাজনীতিতে অনেক কথা বলা যায় না স্পষ্টভাবে। এটা আপনাদের বুঝে নিতে হবে।”

কবির বলেন, “তারেক রহমান নিয়মিত ছাত্র দিয়ে ছাত্রদল সাজানোর যে স্বপ্ন দেখেন, সেই ছাত্রদলের সাথে স্বার্থান্বেষী মহলের ২০০০ সালের এসএসসি ধরে ছাত্রদল সাজানো পুরোপুরি উল্টো।

“স্বার্থান্বেষী মহল তাদের বিশেষ লক্ষ্য পূরণে দেশনায়ককে ভুল উপস্থাপনা দিয়ে একদিকে যেমন আমাদের সাথে প্রতারণা করছে, তেমনি তারা দেশনায়ক তারেক রহমানের সাথে প্রতারণা করে তার স্বপ্নের নিয়মিত ছাত্রদলে কমিটি গঠনের সদিচ্ছাকে লুণ্ঠন করেছে।”

বর্তমান সমস্যা সমাধানে ২০০০ সালে এসএসসি পাসের শর্ত তুলে দিয়ে ৬ মাসের জন্য ছাত্রদলের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব তারেক রহমানকে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতারা।

“আমরা স্বল্পকালীন কমিটির প্রস্তাব করেছি। ব্যক্তিকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের বয়সসীমা নির্ধারণ তুলে দিয়ে নির্বাচন দেওয়া হোক বা প্রিয় নেতা তারেক রহমান নিজে কমিটি করুক। নিশ্চয়ই সেটা সবার কাছে সমাদৃত হবে।”