সংসদে ‘শান্তিতে’ কথা বলতে দিচ্ছে না: রুমিন

বাজেটের উপর আলোচনায় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়েছে সংসদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2019, 05:17 PM
Updated : 16 June 2019, 05:22 PM

বক্তব্যের এক পর্যায়ে রুমিন ফারহানা দাবি করেন, সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের বাধার মুখে সংসদে তিনি ‘শান্তিতে’ কথা বলতে পারছেন না।

রোববার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনা শুরু হয়।

সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের এম ফারুক খান, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ, বিএনপির হারুন অর রশীদ, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ ও রুস্তম আলী ফরাজীর পরে বক্তব্য দেন রুমিন ফারহানা। তখন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

রুমিন ফ্লোর পেয়ে জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ উল্লেখ করে বর্তমান সরকারের বৈধতা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য শুরু করলে  সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা শোরগোল করতে থাকেন।

তখন ডেপুটি স্পিকার তাকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি এমন কথা বলবেন না, যাতে অপর পক্ষ উত্তেজিত হবে এবং সংসদ পরিচালনায় ব্যত্যয় ঘটবে।”

রুমিন বলেন, “এই সংসদে আসার সময় আমাদেরকে বলা হয়েছিল, আমরা আমাদের কথা বলতে পারব। সংসদ নেতা এটা বলেছিলেন। কিন্তু আমার প্রথম দিনের বক্তব্যের সময় এক মিনিটও শান্তিতে কথা বলতে পারিনি। একই ঘটনা আজকেও ঘটছে। যদি তাই হয় তাহলে কোন গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি?

“আমি আমার দলের কথা বলব, তারা তাদের দলের কথা বলবেন। কিন্তু আমি উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো সংসদ যদি উত্তেজিত হয়ে যায়, ৩০০ সদস্য যদি মারমুখী হয়ে যায়, তাহলে কী করে বক্তব্য রাখব?”

এসময় সরকারদলীয় সদস্যরা ফের শোরগোল শুরু করলে ডেপুটি স্পিকার রুমিন ফারহানাকে তার বক্তব্য কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সম্পূরক বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার আহ্বান জানান।

বক্তব্যের সময় ফজলে রাব্বী মিয়া বিএনপির এ সাংসদকে তিন বার থামিয়ে দিয়ে ‘অসংসদীয়’ শব্দ ব্যবহার না করতে বলেন।

ডেপুটি স্পিকার বলেন,  “এমন কোনো কথা বলবেন না যা একপাঞ্জ করতে হবে।”

এক পর্যায় ডেপুটি স্পিকার বক্তব্য না দিয়ে রুমিনকে বসে পড়তেও বলেন।

তবে রুমিন ফারহানার মাইক বন্ধ করেননি তিনি। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী তিনি বক্তব্য রাখার সুযোগ পান।

রুমিন বলেন, “সরকারের সক্ষমতা ক্রমশ বাড়ার কথা কিন্তু আমরা দেখছি সরকারের সক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। বাজেটের মাত্র ৭৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়। লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব কখনোই আদায় হয় না।”

নির্বাচন ও কমিশন  নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন কীভাবে নির্বাচন করেছে তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেখা হয়েছে।

“এখানে যারা আছেন, তারা বলেন নির্বাচন কীভাবে হয়েছে? তারা কয়জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? কীভাবে এই সংসদে এসেছেন, সেই প্রশ্ন বিবেকের কাছে করুন।”

প্রয়াত রাজনীতিক অলি আহাদের মেয়ে রুমিন বলেন,  “দেশে আইন আছে, আদালত আছ; কিন্তু আইনের শাসন নেই। গত এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে ৪৫০টি। এমন জঘন্য ঘটনা কোনো দেশে চলতে পারে না। এক দশকে গুম হয়েছে ৬৫০ জনের মতো। এই গুম হওয়া পরিবারের মানুষ এখন একটি লাশ চায়। যেন তাদের জন্য দোয়া করতে পারে।”

রুমিনের বক্তব্য শেষ হলে ডেপুটি স্পিকার ‘অসংসদীয় শব্দ ও বাক্যগুলো’ সংসদের কার্য বিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানান।

রুমিনের বক্তব্যের সমালোচনা করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন,  “বিএনপির একজন সংসদ সদস্য ১০ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন; এর মধ্যে সম্পূরক বাজেট নিয়ে একটি শব্দও নেই। উনি বাজেট নিয়ে এক সেকেন্ডও সমালোচনা ও বিরোধিতা করতে পারেননি। তিনি  অসংসদীয় কথা বললেন, অশ্লীল বক্তব্য দিয়ে গেলেন, শপথ নিয়ে সংসদে এসে সেই সংসদ সম্পর্কে অসংসদীয় কথা বলে গেছেন।

“তিনি প্রমাণ করলেন তাদের বাজেট নিয়ে যৌক্তিক কোনো সমালোচনা করার অধিকার নেই। তারা বাজেট আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।”

পরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকও বিএনপির সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের সমোলোচনা করেন।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা ছাড়াও জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান ও রুস্তম আলী ফরাজীও বিএনপির সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দেন।

এর আগে সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, “দেশে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনের কী গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছেন? এই অযোগ্য-ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা দিতে পেরেছে?”

বিএনপির সাংসদ হারুনুর বলেন, “চার হাজার-সাড়ে চার হাজার টাকা নির্বাচন কমিশন ব্যয় করেছে, এই টাকা অপচয় করেছে। ব্যর্থ হয়েছে কমিশন। জাতীয় নির্বাচন কমিশন শুধু নয়, স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের সরে যাওয়া উচিত।

“বলা হচ্ছে, সংসদকে কেন আমরা অবৈধ বলে এখানে প্রবেশ করেছি। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আমরা বলতে চাই, আমরা ছয় জন প্রবেশের মধ্য দিয়ে এই সংসদ বৈধতা পাবে না।”

সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনায় আওয়ামী লীগের আব্দুস শহীদ বলেন,  “জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তাকে নিয়ে নানা কটাক্ষ করা হয়। ভারতের মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা হয় না।

“বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা জাতীয় বেঈমান। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যাতে কেউ কটাক্ষ করতে না পারে তার জন্য সংসদে আইন পাস করতে হবে।”

আলোচনায় জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, “অর্থনীতি পরিচালনার সাথে যারা সম্পৃক্ত করা সকলেই ব্যবসায়ী। এবার অর্থনীতি পরিচালনার টিমে যে কোনো সময়ের চেয়ে ব্যবসায়ী বেশি।”

গণফোরামের মোকাব্বির খান ও বিএনপির মোশাররফ হোসেনও এদিন আলোচনায় অংশ নেন।