জনগণের বিরুদ্ধে এই বাজেট: বিএনপি

তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বাজেটকে ‘উচ্চাভিলাসী’ অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, জনগণের বিরুদ্ধে এ বাজেট দেয়া হয়েছে। এতে ধনী-দরিদ্র্যের বৈষম্য বাড়বে; জন-প্রত্যাশা পূরণ হবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2019, 02:48 PM
Updated : 14 June 2019, 02:48 PM

বাজেট ঘোষণার পরদিন শুক্রবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে বাজেট নিয়ে দলের প্রতিক্রিয়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “এই বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি চাপ পড়বে, তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, বৈষম্য বাড়ছে। ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে, দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভুগছে মধ্য-নিম্নবিত্তরা। তাদের ওপর করের চাপ আরো বেড়ে যাবে।

“এককথায় আমরা বলতে পারি, এতে সামগ্রিকভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে, মানুষ প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ জনগণের বিরুদ্ধে এই বাজেট দেয়া হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

‘অনির্বাচিত সরকারের’ বাজেট দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই বাজেটে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো কিছুই আসেনি। তাদের যে প্রধান সমস্যাগুলা- অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-তার কোনোটাই সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এককথায় এই বাজেট জনপ্রত্যাশা পূরণ করবে না, তারা (জনগণ) নিবার্চনের মতোই এই বাজেটও গ্রহণ করবে না।”

বাজেট বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির এ অধ্যাপক বলেন, বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব আয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা কোনো অবস্থাতে যুক্তিযুক্ত বলা যাবে না।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি এবং গণহারে পদোন্নতির মাধ্যমে বেতনকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কারণে বাড়তি ঋণ নিতে হচ্ছে। ঋণ বাড়ার ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বাজেটে বিশাল ব্যয় হচ্ছে।

মোবাইল ফোন ও সিমের ওপর কর বাড়ানোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “বাজেটে সোনার দাম কমানো হয়েছে, যা কিনা সমাজের সুবিধাভোগী একটা শ্রেণি ব্যবহার করে। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ, সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে।

“বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সিগারেটের উপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির ৩১ শতাংশ আয় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সারা বিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা এক শুভংকরের ফাঁকি।”

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “আমি মনে করি যে, আওয়ামী লীগ সরকার সুবিধাভোগীদের জন্য এই বাজেট প্রণয়ন করেছে। এখানে মানুষের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নেই। ইদানিং আমাদের কৃষকরা আন্দোলন করেছে এমনকি আত্মহত্যা করেছে, তাদের ধানের ক্ষেত পুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাজেটে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের কোনো রকমের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

“আজকে দুর্নীতি। যত বড় বড় প্রজেক্ট, তত বড় বড় দুর্নীতি। দুর্নীতির সমস্ত পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এই যে ২ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক বাজেটের বিশাল অংশ চলে যাবে কমিশন এজেন্টদের কাছে। এই সরকারের মন্ত্রী-আমলা-মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী পাবে। উন্নয়নমূলক বাজেটের সত্যিকারের ফল তৃণমূল পর্যায়ে কত পারসেন্ট যাবে তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসময় সেখানে ছিলেন।