মিথ্যাচার করছেন তথ্যমন্ত্রী: রিজভী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পেট্রোল বোমা উদ্ধারের ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2019, 08:20 AM
Updated : 9 June 2019, 11:08 AM

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “যেখানে সরকারি অনুমোদন ছাড়া কাকপক্ষীও ঢুকতে পারে না, সেই বিএসএমএমইউতে বোমাসদৃশ বোতল উদ্ধারের ঘটনায় তথ্যমন্ত্রী এখন বিএনপির যোগসূত্র খুঁজছেন!

“এজন্যই বলেছি, আওয়ামী লীগের নেতারা চরম মিথ্যাচার দিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্র ঢাকতে পারঙ্গম। তথ্যমন্ত্রী একবার মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এবারে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন শুধু অবান্তর, অবিরল মিথ্যাচারের প্রতিভা প্রমাণ করে।”

গত বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউর প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় রেজিস্ট্রারের কক্ষের সামনে থেকে একটি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে বিএনপি। গত ১ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়া এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এর মধ্যে শনিবার চট্টগ্রামে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে

বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়ার দাবির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা যে নিতে চান না, সেই পরিকল্পনারই এটি কোনো অংশ কি না, সেটি বরং খুঁজে বের করা দরকার।”

হাসপাতালে যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, তা বিএনপিকর্মীরাই আন্দোলনের নামে মানুষের উপর নিক্ষেপ করে বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “বিএসএমএমইউতে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই বোমাসদৃশ জিনিসটি উদ্ধারের পর বিএনপিসহ দেশবাসী সংশয় প্রকাশ করেছে। কিন্তু উনি (তথ্যমন্ত্রী) উনার স্বভাবসুলভ যে কথাগুলো মিডিয়ার সামনে দিয়েছেন তা শুধু দুঃখজনকই না, তারা যে কোনো একটা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছে, সেটা তাদের কথার মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসে।

“দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টাকে না দেখে- ঘোড়ার সামনে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো, তদন্তের কথা বলছেন, তার আগে ফলাফল দিয়ে দিচ্ছেন- পেট্রোল বোমা এই কাজগুলো তো বিএনপি সবসময় করে। দেশের তথ্যমন্ত্রী মিডিয়া তার হাতে মুঠোয় রেখে সকাল-সন্ধ্যা এই সমস্ত কথা যদি বলতে থাকেন, তাতে এই দেশ তো এমনি খাদের কিনারায় চলে গেছে, এখন অতলে তলিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।”

তথ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “তথ্যমন্ত্রীর তো ভুলে যাওয়ার কথা নয়, শেরাটনের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে সারাদেশে গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা কারা করেছিল, বিহঙ্গ গাড়িতে পেট্রোল হামলা কারা করেছিল, যা পরবর্তীতে আওয়ামী নেতারাই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এই স্বীকারোক্তির কথাটা তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করলেন না কেন? নরসিংদী রোডের বিআরটিসি বাস আজিমপুরে নিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছিল কারা? এসব করেছিল যারা, তারা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও রাষ্ট্রযন্ত্র- যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

“নারায়ণগঞ্জে পেট্রোল বোমা হামলায় যুবলীগ নেতাদের কিভাবে আটক করা হয়েছিল, রাবিতে ছাত্রলীগ বোমা হামলার স্বীকারোক্তি কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছিল। পেট্রোল বোমা কালচার আওয়ামী লীগের আবিষ্কৃত কালচার, সেটা তথ্যমন্ত্রী এড়িয়ে গেলেও দেশবাসী ঠিকই জানে।”

রিজভী বলেন, “হত্যা, ধর্ষণের গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজ, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও সরকারের টনক নড়ে না। ক্ষমতাসীনদের আশকারাতেই ক্ষমতাসীনরা শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে।”

নরসিংদীর রায়পুরায় দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফউদ্দিন বকুলের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মামুন আহমেদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।