সাবেকরা দুষছেন ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে, রাব্বানী বললেন ‘সিন্ডিকেটের’ কথা

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিতর্কের জন্য সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ‘উদাসীনতার’ কথা বলেছেন সাবেক নেতারা।

কাজী মোবারক হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2019, 06:59 PM
Updated : 18 May 2019, 07:10 PM

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ছাত্রলীগে দীর্ঘ দিনের একটা ‘সিন্ডিকেট’ রয়েছে, তারাই নানাভাবে সংগঠনকে বিতর্কিত করতে চাইছে।

তবে কারা এই ‘সিন্ডিকেট’ চালান বা কারা তাদের সঙ্গে আছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হয়। এরপরই অযোগ্য এবং বিবাহিত ও মামলার আসামিসহ নানা অভিযোগবিদ্ধ অনেককে কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ তোলেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা।

কমিটি পুনর্গঠন চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়, যাতে ছয়জন নেত্রীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এরপর তারা হামলার প্রতিবাদ এবং বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী

ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মু‌ক্তিযু‌দ্ধের চেতনাবি‌রোধী, বিবা‌হিত, অছাত্র, মামলার আসামিসহ নানা অভি‌যো‌গে অভিযুক্ত ১৭ জনকে চিহ্নিত করে তাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব।

তবে বিক্ষুব্ধরা বলছেন, এই সংখ্যা হবে ৯৭ জন। এদের কেউ বিবাহিত, কেউ অনুপ্রবেশকারী, কেউ মাদকসেবী, কেউ মামলার আসামি, কারও বয়স পেরিয়ে গেছে, কেউ চাকরিজীবী, কেউ ছাত্রদল কিংবা শিবির থেকে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

এই সমস্যার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকেই দায়ী করেছেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উদাসীনতা ছিল। তারা সঠিকভাবে যাচাই- বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে নাই।

“আমি মনে করি, বিবাহিত, চাকরিজীবী, বয়স অধিক এই বিষয়গুলো জানা খুব কঠিন বিষয় না। একটু খোঁজ খবর নিলেই তারা বের করতে পারত, তাদের উদাসীনতার কারণেই এত বিতর্কিতরা কমিটিতে স্থান পেয়েছে।”

তার এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী পাল্টা অভিযোগ তোলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল ছাত্রলীগকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করত, এখন ছাত্রলীগ ভিন্ন ধারায় চলছে বলে তাদের আতে ঘাঁ লেগেছে। তাই তারা সংগঠনকে বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আসলে ক্লিয়ারলি বললে, ছাত্রলীগে দীর্ঘ দিনের একটা সিন্ডিকেট ছিল, তারাই নানাভাবে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে চাইছে।”

কমিটি নিয়ে বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও করেন তিনি।

জবাবে বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, “এখন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।

“এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগীদের নিয়ে কমিটি ঢেলে সাজানো।”

আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন সামসুল কবির রাহাত। পরে ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রাহাতের মতে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এই সমস্যা হয়েছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগের রাজনীতিতে মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটেছে। কেউ কর্মী হতে চায় না, সবাই নেতা হতে চায়।”

সদ্য বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনিও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতৃত্বকে ‘আদর্শচ্যুত’ বলেছেন।

“তারা এখন আর আদর্শের চর্চা করে না, নিজেদের ভাগভাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আজকে ছাত্রলীগ নিয়ে মানুষ এত কথা বলার সুযোগ পায়।”

রনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমান শীর্ষ নেতারা উদাসীনভাবে নিজেদের পছন্দের মূল্যায়ন করতে গিয়ে গোটা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করেছে। এটা যেমন কাম্য নয় তেমনি ছাত্রলীগে যারা নিজেদের তথ্য গোপন করে পদ নিয়েছে সেটাও কাম্য নয়।

ছাত্রলীগ এভাবে চলতে থাকলে ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতি হুমকির মুখে পড়বে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও তথ্য গোপন করে পদ নিয়ে থাকলে তাদের বিচার হওয়া উচিত মন্তব্য করে মেহেদী হাসান রনি বলেন, “ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রেখে যারা নেতা হয়েছে তাদের ধিক্কার জানাই। সে যেই হোক না কেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও নিজেদের তথ্য গোপন করে থাকলে তাদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন।”

এবার ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠা চার নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তাদের মধ্যে অন্যতম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্য নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ১৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এখানে অনেকেই মিথ্যা-বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে ছাত্রলীগকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে।

“আমি মনে করি, আরও সময় নিয়ে যারা প্রকৃতপক্ষে দোষ করেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেটা যাচাই-বাছাই করতে আরও সময় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।”

অচিরেই এই বিতর্কের অবসান হয়ে ছাত্রলীগের সবার মুখে হাসি ফিরবে বলে মনে করছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

“এটা সৃষ্টির প্রসব বেদনা, নতুন ধারার ছাত্রলীগ; বেদনা কেটে গেলে আনন্দঘন পরিবেশ ফিরে আসবে,” বলেন তিনি।