কখনো পদ চাইনি, সবাইকে পদে বসিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

ছাত্র জীবনে রাজনীতি করার সময় নিজের পদ নিয়ে চিন্তা না করে বরং পদ সৃষ্টি করে সেখানে অন্যদের বসানোর দায়িত্ব পালন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2019, 12:12 PM
Updated : 17 May 2019, 12:18 PM

‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার গণভবনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসা দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার রাজনীতি ছাত্র জীবন থেকেই শুরু। তবে কখনো কোনো বড় পোস্টে ছিলাম না, বড় পোস্ট চাইওনি কখনো। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। আমরা কখনো পদ নিয়ে চিন্তা করিনি, পদ আমরা চাইওনি। আমরা পদ সৃষ্টি করা এবং সবাইকে পদে বসানো- এই দায়িত্বটাই পালন করতাম।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করে তার কন্যা বলেন, “আমরা রাজনীতির কাজ করে যেতাম আব্বার আদর্শ নিয়ে। তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। আমরা দুটো বছরও আব্বাকে এক সাথে জেলের বাইরে পাইনি। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কথনো হা-হুতাশ ছিল না। আমাদের মা খুব দৃঢ চেতা ছিলেন। আমার বাবার অবর্তমানে মা পার্টিও চালাতেন। মামলা মোকাদ্দমাও চালাতেন। সবই করতেন তিনি। সংসারও দেখতেন।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ও দুই সন্তানসহ শেখ হাসিনা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে তারা প্রাণে বেঁচে যান। প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।

বক্তব্যের শুরুতে দেশের মাটিতের ফেরার ঘটনা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল। বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে সংসদ ভবনের সামনে আসতে প্রায় চার ঘণ্টা লেগেছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ওই বছর তার অনুপস্থিতিতে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। অনেক বাধা-বিপত্তি থাকলেও দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিনি দেশে এসেছেন। তারপর অনেক সময় পার হয়েছে।

তিনি বলেন, “এই ৩৮ বছরে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হোক, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক, এমন কোনো কাজ আমি বা আমার পরিবারের কোনো সদস্য কখনো করিনি। নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার জন্য কাজ করিনি, কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য। সব সময় চিন্তা করেছি মানুষকে কি দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম। আমরা যতবার ক্ষমতায় এসেছি, মানুষের জন্য কাজ করেছি তত মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি।”

এক পর্যায়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা দলের সভানেত্রী হিসেবে ৩৮ বছর এটা বোধ হয় একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।” তখন উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন, না। তখন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় আপনাদেরও সময় এসেছে, তাছাড়া বয়সও হয়েছে। … এ বিষয়গুলো তো দেখতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “২১ বছর পর দল ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় গেলে কি করব তার প্রস্তুতি ছিল বলেই পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশের মানুষের মধ্যে একটা আস্থা তৈরি করতে পেরেছিলাম। ক্ষমতায় থেকেও মানুষের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি- এটাও কিন্তু বিশাল অর্জন।

“নেতা-কর্মীদের কাছে এইটুকু চাইবো- এই আস্থা বিশ্বাস যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। ব্যক্তিগত জীবনে কি পেলাম, না পেলাম সে চিন্তা যেন করি। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম- সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।”