বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক অন্যান্য দলের নেতাদের উপস্থিতিতে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় একথা বলেন তিনি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ বলেন, জোটের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তাকে অথবা ঢাকায় অবস্থানরত কোনো বিএনপি নেতাকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
“বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদের নির্দেশ নেওয়া সম্ভব না। আবার তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদেরকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।”
সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ১৯৭৮ সালে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের গড়ে তোলা বিএনপিতে যোগ দেন অলি আহমেদ। সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে থাকা অলি দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।
২০০৬ সালে বিএনপি ছেড়ে আরেক সাবেক বিএনপি নেতা এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে মিলে এলডিপি গঠন করেন তিনি। পরে দল নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটেই ভেড়েন অলি আহমদ।
‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি’ শিরোনামের এই সভায় তিনি বলেন, “জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক জায়গায় একত্রিত হন। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করেন। না হলে আপনাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকে বলেন, আমরা সেটা করতে রাজি আছি।
“আমি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে পারি নাই, এবার স্বৈরাশাসকের হাতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। বিএনপির যারা আছেন আপনাদের মধ্যে কথা বলেন। কারা কারা আসবেন আমাদের সাথে আসেন।”
“আপনাদের মধ্যে যদি কেউ নেতৃত্ব দিতে পারে, তার নেতৃত্বেও আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে জাতির কাছে। যে জাতির সাথে বেঈমানি করে নাই, যার অভিজ্ঞতা রয়েছে, যে কারও সাথে আপস করবে না, দুর্নীতির কাছে মাথা নত করবে না। তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
বিএনপি সংসদে যোগ দিয়ে এই সরকারের বৈধতা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করে অলি আহমদ।
তিনি বলেন, “আজকে এখানে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের অনেকে আছেন। আপনাদের অনুরোধ করব, অন্যদিকে তাকানোর সুযোগ নেই। আপনারা এখানে মধ্যবর্তী নির্বাচনকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আসলে আপনাদের এটার মূল স্পিরিটটা দেখতে হবে। বিএনপি সংসদে গিয়েছে এটাই হলো বাস্তবতা।”
দেশে গণতন্ত্র ‘পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করতে হলে সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদ।
অলি আহমদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মিয়া গোলাম পরোয়ার, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের কারণে জামায়াতে ইসলামীকে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “জামায়াত যদি সত্যিকার অর্থে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় তাহলে তাদেরকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে।”
২০ দলের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, “আজ তাদের পিতারা যে ভুল করেছেন তার জন্য বর্তমানে যারা আছে তাদেরকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে। কারণ তাদেরও রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারপাশে যারা আছেন তাদের চিন্তা-চেতনার কারণেই খালেদা জিয়া আজ জেলে। আর খালেদা জিয়াকে বের করে আনতে সামগ্রিক আন্দোলন প্রয়োজন।
“সেই আন্দোলনের মূল ভূমিকা বিএনপিকেই রাখতে হবে। বিএনপিকে সকল প্রকার ভুল-ত্রুটি শুধরে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে।”