ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর মারামারি

ছাত্রলীগের সদ্যগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলতে গিয়ে পদ পাওয়া নেতাদের মারধরের শিকার হয়েছেন পদ না পাওয়ারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2019, 02:57 PM
Updated : 13 May 2019, 06:15 PM

সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এই হামলায় নারীকর্মীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

সম্মেলনের এক বছর পর সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনেই এই কমিটি হয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।

তবে কমিটিতে স্থান না পাওয়ারা দাবি করছেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে ‘বিবাহিত ও অছাত্রদের’ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

নতুন কমিটি ঘোষণা কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী; যাদের কেউ পদ পাননি, কেউবা কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর পরপরই সেখানে হামলা চালিয়ে তা পণ্ড করে দেয় আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেওয়া পদ পাওয়া শতাধিক নেতা।

প্রকাশ্যেই চালানো এই হামলায় তারা সংবাদ সম্মেলনের ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে যায় এবং মারধর করে সংবাদ সম্মেলনকারীদের। রক্তাক্ত মুখে কয়েকজনকে মধুর ক্যান্টিন ছাড়তেও দেখা যায়।

 

আহতদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক উপ সম্পাদক ও ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির উপ বিজ্ঞান সম্পাদক তানভীর আহমেদ, রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবনী দিশা, রোকেয়া হলের সভাপতি ও ডাকসুর কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি (নতুন কমিটিতে উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক), শামসুন্নাহার হলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন শান্তা, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি ও ডাকসু সদস্য নিপু ইসলাম তন্বী (বর্তমান কমিটির উপ সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক), কুয়েত মৈত্রী হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক আইন সম্পাদক সাইফুর রহমান।

‘যোগ্যদের বঞ্চিত করে বিবাহিত, বিতর্কিত, অছাত্র ও অযোগ্যদের দিয়ে গঠিত কমিটি’ বাতিলের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতিতে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ না পাওয়ারা, যাদের উপর হয়েছে হামলা

এদের অন্যতম নেতা ও সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, “বিবাহিত, অছাত্র ও চাকরিজীবীদের দিয়ে যেই কমিটি আজকে করা হয়েছে তা বতিলের সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে আমাদের ওপর হামলা হয়। আমাদের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”

কমিটিতে যাদের নিয়ে আপত্তি, সেই ‘বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের তালিকা’ অচিরেই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

সাবেক কমিটির উপ-প্রচার সম্পাদক সাইফুর রহমান বলেন, “আমি ছাত্রলীগের হল ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি। পাশাপাশি নির্যাতিত আওয়ামী পরিবারের সন্তান আমি। তাহলে কোন অযোগ্যতায় আমাকে বাদ দেওয়া হল?”

নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামস ই নোমান, মাহবুব খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান, সহ সভাপতি সাদিক খানকে হামলার নেতৃত্বে দেখা গেছে। 

শামস ই নোমান হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে ছিলাম, এটা সত্য। কিন্তু হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোক আমরা নই, এই কাজ আমি করিনি।”

ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন কিংবা সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি সংঘর্ষের বিষয়ে।

তবে রব্বানী তার ভেরিয়াইড ফেইসবুক পাতায় সোমবার রাতে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, “যেদিন আপনি সবার মন জুগিয়ে চলতে পারবেন, সেদিন বুঝবেন আপনি আর মানুষ নেই, মূর্তি না হয় দেবতা বনে গেছেন।”

আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের তোপের মুখে পড়েন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী

হামলায় আহতদের দেখতে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে সেখানে উপস্থিত বিক্ষুব্ধ নেতারা দুই শীর্ষনেতাকে আহতদের কাছে ভিড়তে দেননি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দুজনকে দেখেই স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ নেতারা; ‘মানবতার কথা বলে, বোনদের উপর হামলা কেন’, ‘বিবাহিতরা কমিটিতে কেন, মানি না মানব না, ‘রাজাকারপুত্র কমিটিতে কেন, মানি না মানব না’ শোর তোলেন তারা। শোভন-রাব্বানীর সঙ্গে থাকা নেতারাও তোলেন পাল্টা স্লোগান।

শোভন ও রাব্বানীর পথ আটকে দাঁড়ান রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ডাকসুর ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি। তিনি বলেন, “রাজাকারপুত্র, বিবাহিত, অছাত্রদের কমিটিতে রেখেছেন, আমাদের মতো ত্যাগীদের কেন মুল্যায়ন করেননি?”

জবাবে সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী বলেন, “সামনে মুল্যায়ন করা হবে।”

এসময় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, “যাদের কমিটিতে রেখেছেন, তারা কোন বিবেচনায় আমাদের চেয়ে যোগ্য?”

শোভন বলেন, “সব কিছু বিবেচনা করা হবে, এখন আমরা আহতদের দেখতে আসছি।”

এ সময় সাবেক কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুদ্দিন বাবু বলেন, “ত্যাগী নেতাদের মারধর করে কোন সিম্পেথি নেওয়ার জন্য এসেছেন। কোনোভাবেই এই নাটক করতে দেওয়া হবে না।”

প্রায় আধা ঘণ্টা বাক-বিতণ্ডার পর আহতদের দেখতে না পেরে হাসপাতাল থেকে ফিরে আসেন শোভন ও রাব্বানী।