যেখানে মিললেন আ. লীগ-বিএনপির নেতা

রাজনীতিতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান থাকলেও চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝূঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে যাওয়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের থেকে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার রক্ষায় জোটবদ্ধ হলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2019, 03:27 PM
Updated : 4 May 2019, 03:51 PM

তাদের চাপে চট্টগ্রামের লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকার একটি পাহাড়ের বসতিতে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নেওয়া লাইনের ওই ট্রান্সফরমার রেখে আসতে হয়েছে জেলা প্রশাসনের অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদের, যেখানে পাঁচজন সহকারী কমিশনার ছিলেন।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বোঝানোর চেষ্টায় স্থানীয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি এবং লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম।

এই দুই নেতা হলেন- স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি এবং লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকার বিভিন্ন পাহাড় ধসে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে তা পুরোপুরি সফলতার মুখ দেখে না।

২০০৭ সালে লালখান বাজারের মতিঝর্ণাসহ চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৮ সালে মতিঝর্ণা এলাকাতেই পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়।

এরপর ২০১১ সালের ১ জুলাই টাইগার পাস বাটালি হিলে পাহাড়ের দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১১ জুন রাতে টানা বৃষ্টি, ধস আর পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রামে ১৩২ জনের মৃত্যু হয়। শুধু রাঙামাটিতে মৃত্যু হয়েছিল ১২০ জনের।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাদের চাপে ট্রান্সফরমার রেখে আসেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা

চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মৃত্যু ঠেকাতে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিতে সেখানকার বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ আগামী ১৫ মে-এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।  

আগের দিন উত্তর পাহাড়তলির তিন নম্বর ঝিলপাড় এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ট্রান্সফরমার অপসারণ করতে গিয়ে স্থানীয়দের হামলার শিকার হন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা।

এরপর শনিবার সকালে খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকার মতিঝর্ণা বাটালি হিলে অভিযানে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অধীন পাঁচটি ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনাররা।

এরা হলেন- চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফোরকান এলাহী অনুপম, বাকলিয়া সার্কেলের সাবরিনা আফরিন মোস্তফা, সদর সার্কেলের ইসমাইল হোসেন ও আগ্রাবাদ সার্কেলের শারমিন আক্তার। পিডিবি ও ওয়াসার কর্মীরা তাদের সঙ্গে ছিলেন।

ট্রান্সফরমার অপসারণ করা না গেলেও পাহাড়ের অবৈধ বসতির ঘর থেকে মিটার জব্দ করা হয়েছে এই অভিযানে

এ সময় অভিযানকারী দল বাটালি হিল এলাকায় অবৈধভাবে দেওয়া বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

অভিযানের এক পর্যায়ে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী ম্যাজিস্ট্রেটরা মতিঝর্ণা এলাকার একটি ট্রান্সফরমার বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বিএনপি নেত্রী মনোয়ারা ও আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল তাদের বাধা দেন।

অভিযানে থাকা কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদ্যুৎ বিভাগের একটি ট্রান্সফরমার থেকে অবৈধভাবে দেওয়া বিভিন্ন সংযোগ আমরা বিচ্ছিন্ন করি।ওই এলাকার বিভিন্ন ঘর থেকে অবৈধভাবে নেওয়া সংযোগের ২৪টি বৈদ্যুতিক মিটার জব্দ এবং একটি অবৈধ পানির পাম্প ধ্বংস করা হয়।”

অবৈধ সংযোগ দেওয়া হবে না শর্তে কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মনোয়ারা বেগম মনির জিম্মায় রাখা হয়েছে ওই ট্রান্সফরমার

সব মিলিয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে অবৈধভাবে দেওয়া দুই শতাধিক ঘরের পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে জানান তৌহিদুল ইসলাম।

এক পর্যায়ে তারা মতিঝর্ণার ট্রান্সফরমারটি অপসারণ করতে গেলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওই  দুই নেতা বাধা দেন বলে জানান তিনি।

“এ সময় ওই ট্রান্সফরমার থেকে নতুন করে অবৈধ কোনো সংযোগ না দেওয়ার শর্তে কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনির জিম্মায় দেওয়া হয়।

“ওই জিম্মানামায় সাক্ষী হিসেবে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম স্বাক্ষর করেছেন।”

স্থানীয় এই দুই নেতা লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা, তবে তাদের কারও বসবাস মতিঝর্ণা এলাকায় নয়। ট্রান্সফরমার অপসারণ হলে তাদের ঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোনো ঝুঁকি ছিল না।