ফখরুলের শপথ না নেওয়াও ‘দলীয় সিদ্ধান্তে’

বাজারে খবর যাই থাক, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানালেন, একাদশ জাতীয় সংসদের আইনপ্রণেতা হিসেবে তিনি শপথ নিচ্ছেন না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2019, 10:23 AM
Updated : 5 May 2019, 09:35 AM

মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, দল সিদ্ধান্ত বদলেছে বলেই তাদের নির্বাচিত চারজন এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর দলীয় সিদ্ধান্তেই তিনি শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এটা তাদের ‘কৌশলেরই অংশ’।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত ফখরুলই কেবল সংসদের বাইরে থাকছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তোলার পর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। জোটভুক্ত দল গণফোরামের দুজন শপথ নেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ করেছিল দলটি।

বিএনপি তিন দিন আগেও ওই সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়েছিল; সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদকে।

কিন্তু বিএনপির সংসদে ফেরার গুঞ্জন সত্যি করে সোমবার সন্ধ্যায় স্পিকারের কাছে শপথ নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। পাঁচ দিন আগে শপথ নেওয়া জাহিদুর রহমান জাহিদও ছিলেন তাদের সঙ্গে।

রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসে ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপির সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন।

তবে নিজের শপথের বিষয়টি তিনি স্পষ্ট না করায় শুরু হয় নানা ধরনের গুঞ্জন; এর ভিত্তিতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানবাধিকার সংগঠন ‘আওয়াজ’ এর এক আলোচনা সভায় এসে নিজের এবং দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে কয়েকটি চ্যানেলে থেকে জোরেসোরে এবং কিছু কিছু পত্রিকায় বলা হচ্ছে…আমি শপথ নেওয়ার জন্য সময় চেয়েছি, আবেদন করেছি। এটা একেবারে ডাহা মিথ্যা। আমি কোনো চিঠি দিইনি, কোনো সময় চাইনি।

“এখন আপনারা (গণমাধ্যম) আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, আমার দল সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, তাহলে আমি শপথ নিলাম না কেন? এটাও আমার দলের সিদ্ধান্ত। এটা আমাদের কৌশল, সেই কৌশলে আমি শপথ নিইনি, আমি শপথের জন্য কোনো চিঠি দিইনি।”

শপথের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত বদলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে বিশ্বে রাজনীতির যে ধারা চলছে, তাতে সব সিদ্ধান্ত একেবারে চূড়ান্ত হয়ে থাকবে, স্থবির হয়ে থাকবে- এটা সব সময় ‘সঠিক নয়’ বলেই তারা বিশ্বাস করেন। 

“ন্যূনতম যে সুযোগটুকু আছে সংসদে কথা বলার সেই সুযোগটিকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে অনেকে অনেক রকম কথা বলছেন। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্তটা খুব খারাপ না। আমাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় যুক্তি যেটা- এই সামান্যতম যে স্পেসটা রয়েছে, সেই স্পেসটাকে ব্যবহার করা।”

যারা এখন বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “অনেকে অনেক কথা বলতে পারেন। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু স্ট্যাটিক বা স্থির নয়, পরিবর্তন হয়। সময়ের প্রয়োজনে সেই সিদ্ধান্তটা পরিবর্তন হয়।”

এই সিদ্ধান্ত সঠিক কি না- সময়েই তা প্রমাণ হবে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই সিদ্ধান্তটা সঠিক সিদ্ধান্ত। এখন অনেকে বলতে পারেন তাহলে আগে কেন গেলেন না? আগে করি নাই বলে এখন যে করব না তার তো কোনো মানে নেই। আগে আমরা নিইনি বিভিন্ন প্রেক্ষিতে, এখন আমরা নিচ্ছি বাস্তবতার প্রেক্ষিতে।”

‘সিদ্ধান্তের পেছনে সমঝোতা নেই’

সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত বদলের পেছনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার যে গুঞ্জন রয়েছে, সে বিষয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “বিএনপি সমঝোতা করলে অনেক আগেই সমঝোতা করতে পারত। বেগম খালেদা জিয়া যদি সমঝোতা করতেন তাহলে উনি প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না… এই কথাগুলো আপনাদের মনে রাখতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কখনোই নীতির প্রশ্নে ‘আপস করেননি’ দাবি করে ফখরুল বলেন, “আমরা সেই দল, যারা বেগম খালেদা জিয়ার সেই নীতিকে সামনে নিয়ে এগিয়ে চলেছি।”

সমালোচকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আমরা বাস্তবতা সামনে রেখে চলছি, আমরা অন্ধের মতো চলছি না। আমরা দেখছি যে, বাস্তবতাগুলো কি।… দেখেশুনে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ৪/৫ জন আছেন তারা সংসদে গিয়ে কথা বলবেন। তার প্রমাণ আপনারা দেখেছেন গতকালই, হারুন সাহেব (হারুনুর রশীদ) সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেখানে সব কিছু স্পষ্ট হয়ে এসেছে।”

সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে নয়, বরং সংসদের ভেতরে-বাইরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তুলতেই বিএনপি সংসদে গেছে বলে দাবি করে দলের মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমি খুব দুঃখ পাই, কষ্ট পাই, যখন দেখি যে যারা অত্যন্ত ভালো সাংবাদিক, সম্মানিত সাংবাদিক, তারা যখন বিভিন্ন রকম কথা লেখেন, যার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নাই। আজকে দেখলাম একটি পত্রিকা লেখে দিয়েছে মির্জা ফখরুল আজ শপথ নিচ্ছেন। তাহলে ওই পত্রিকার কী হল? যখন দেখবে আমি শপথ নিচ্ছি না, তখন ওই পত্রিকার কী পরিণতি হবে, ওই পত্রিকার, ওই সাংবাদিকের ক্রেডিবিলিটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?”

‘উন্নয়নের মৃত্যুকূপে জনজীবন ও নুসরাত একটি প্রতিবেদন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়াজের সভাপতি সেলিমা রহমান।

বিলকিস জাহান শিরিনের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আওয়াজের প্রধান সমন্বয়নকারী অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, সৈয়দা ফাতেমা সালাম, ফরিদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিকা আফরোজ, রাশেদা ওয়াহিদ মুক্তা, সায়মা বেগম, সাদিয়া হক বক্তব্য দেন।