শপথ নিতে সরকারের চাপ আছে: ফখরুল

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে জাহিদুর রহমান জাহিদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পেছনে সরকারের চাপ ছিল বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2019, 08:28 AM
Updated : 26 April 2019, 08:28 AM

তবে জাহিদ সংসদে যাওয়া্য় বিএনপির ‘খুব বেশি উদ্বিগ্ন’ হওয়ার কিছু দেখছেন না তিনি।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান মির্জা ফখরুল। সেখানেই জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। 

শপথ নেওয়ার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো চাপ আছে কিংবা বিএনপিকে ভাঙার কোনো চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করেন কি না- এমন প্রশ্ন বিএনপি মহাসচিবের সামনে রেখেছিলেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে ফখরুল বলেন, “এটা তো স্বাভাবিক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বাংলাদেশে বরাবরই এ ধরনের দল ভাঙার প্রচেষ্টা হয়েছে, ভেঙেছে। কিন্তু বিএনপিকে এভাবে ভেঙে বা দল থেকে ছুটকে নিয়ে গিয়ে কোনো লাভ হয়নি। বিএনপি সবসময় তার নিজের পায়ে ফিরে এসে দাঁড়িয়েছে এবং স্বমহিমায় জনগণের কাছে গেছে।”

শপথ নেওয়ার পেছনে সরকারের চাপ আছে- এটাই বলতে চাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নিঃসন্দেহে, সব সময়ই থাকে, যে সরকারই আসুক, এ ধরনের সরকার যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না, তাদেরকে এভাবে ভিন্ন অগণতান্ত্রিক কৌশলেই চেষ্টা করতে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।”

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন পায় বিএনপি। গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন।

নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সংসদে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও গণফোরামের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমপি হিসেবে শপথ নেন।

সেই পথ অনুসরণ করে বিএনপির প্রথম এমপি হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান।

মির্জা ফখরুল বলেন, “জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে। এটা তিনি অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন, অন্যায় করেছেন, অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে, যেটা আমরা বলি সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।”

একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্তে দলের বড় কোনো ক্ষতি হয় না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই ধরনের ঘটনায় দলে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই, এই ধরনের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে এবং এতে আমরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন নই।”

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ শপথ নিলে সংসদে তার সদস্যপদের বৈধতা নিয়ে বিএনপি স্পিকার বা নির্বাচন কমিশনের কাছে যাবে কি না এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছিল মির্জা ফখরুলের সামনে। উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জাহিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের সিদ্ধান্ত হতে পারে জানতে চাই তিনি বলেন, “সেটা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। আমি তো একা সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক নই। যখন সিদ্ধান্ত হবে আপনারা তা জানতে পারবেন।”

বিএনপির দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেতা জাহিদ সংসদে যোগ দেওয়ায় নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে কিনা- এ প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এটা আপনারা (সাংবাদিকরা) মনে করতে পারেন, আমরা মনে করি না।”

দলের সিদ্ধান্ত নির্বাচিতরা মানছেন না এবং অনেকে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলছেন- এ বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এখানে এমপিরা বলতে তো কেউ নেই। এখন পর্যন্ত একজন গেছেন। বাকি যারা আছেন, যাদেরকে আপনারা ইঙ্গিত করছেন, তাদের সিদ্ধান্ত আমরা জানি না বা তারা জানায়নি এখনো।

“আমাদের দলের যেটা সিদ্ধান্ত ছিল সেটাই বহাল আছে। আমরা শপথ গ্রহণ করব না- এ বিষয়ে আর কোনো দ্বি-মত থাকার কথা নয়। দলের সিদ্ধান্ত যারা ভঙ্গ করবেন তাদের বিরুদ্ধে দল যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।”

জাহিদ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী বিএনপির বাকি পাঁচজন হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (বগুড়া-৬), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), হারুনুর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪) ও উকিল আবদুস সাত্তার (ব্রাক্ষণবাড়ীয়া-২)। এ মাসের মধ্যে শপথ না নিলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। 

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি ‘বড় কোনো কর্মসূচি’ নেবে কিনা- এ প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “বড় কর্মসূচি বলতে আপনারা কী বোঝাচ্ছেন, আমরা জানি না। আমরা দেশনেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে আন্দোলনে সংগ্রামে আছি। এটা ধীরে ধীরে জনগণের দাবিতে পরিণত হচ্ছে এবং হবে।”

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে এদিন নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার কবর জিয়ারত এবং পুস্পমাল্য অর্পণ করেন বিএনপি মহাসচিব।

মহিলা দলের জেবা খান, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।