জোবায়দার রাজনীতিতে আসার গুঞ্জন থাকায় মুদ্রাপাচার কাহিনী: খন্দকার মাহবুব

যুক্তরাজ্যে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের তিনটি ব্যাংক হিসাব বন্ধে আদালতের নির্দেশ নিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, জোবায়দার দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার গুঞ্জনের কারণে চমক সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থপাচারের কথা তুলছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2019, 12:45 PM
Updated : 21 April 2019, 12:48 PM

তাছাড়া যুক্তরাজ্যের স্যানট্যান্ডার ব্যাংকে তারেক দম্পতির অ্যাকাউন্ট জব্দের যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তার এখতিয়ার আদালতের নেই বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

“শুধু তাই না, আদেশটি সম্পূর্ণ বেআইনি,” বলেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।

অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির দুটি এবং ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত তারেক বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্যে নিয়ে তা বিনিয়োগ করছেন বলে দুদকের অভিযোগ।

এজন্য তাদের এক আবেদনে গত বুধবার ঢাকার আদালত তারেক ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের যুক্তরাজ্যের ব্যাংকের তিনটি হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন।

রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এক দশক আগে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া খন্দকার মাহবুব।   

তিনি বলেন, “তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে আছেন। লন্ডন একটি আইনের শাসনের দেশ, সেখানে কারচুপির মাধ্যমে কোনো অর্থ ব্যাংকে জমা দেওয়া যায় না। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যেসব টাকা থাকে প্রতিটি টাকায় ইনকাম ট্যাক্স পে করতে হয়। সে কারণে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে কোনো টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া সম্ভব না।”

চমক সৃষ্টি করতেই মুদ্রাপাচারের কথা ছড়ানো হচ্ছে দাবি করে খন্দকার মাহবুব বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে অযথা একটা চমক সৃষ্টি করেছেন। তারেক রহমান সাহেবের মানি লন্ডারিংয়ের কোনো অর্থ যুক্তরাজ্য কেন পৃথিবীর কোথোও নেই।

“আপনারা জানেন ওয়ান-ইলেভেনের পরে এবং তার পরবর্তী সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তছনছ করে দেখেছে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কোনো অর্থ সে দেশে আছে কি না। তারা খোঁজ পায়নি।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান (ফাইল ছবি)

“শেষ মুহূর্তে এসে যেহেতু বাজারে একটা গুঞ্জন চলছে যে, ডাক্তার জোবায়দা রহমান হয়ত বাংলাদেশে আসবেন, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন- এই গুঞ্জনের কারণে জোবায়দা রহমানকে এখানে ইমপ্লিকেট করা হয়েছে।”

আদালতের সমালোচনা করে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এমন একটি দেশে আছি যেখানে আদালত অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব বিচার-বিবেচনা না করে সরকার পক্ষকে যা চায় সেই আদেশটি দিয়ে দেয়।

“আমরা আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, যে আদেশটি দেওয়া হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এই ধরনের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের দেশের কোনো আদালতের নেই।”

আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আইনি পদক্ষেপ তো আমরা এখানে বসে নিতে পারব না। যাদের বিরুদ্ধে করেছে, যাদের কথা বলা হয়েছে লন্ডনে তারা কী করবেন, সেটা তাদের উপর নির্ভর করে। আর এটাও আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, এই আদেশে লন্ডনের কোনো ব্যাংক কারও অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে পারে না।”

তিনি বলেন, “তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিয়ে আসা হচ্ছে-এর কোনোটাই যখন সফল হয় নাই এখন তারেক রহমান সাহেব ও তার স্ত্রীকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা দিয়ে চমক সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে।”

তিনি এই কথা বললেও দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের ব্যাংকটিতে তারেক রহমানের নামে দুটি এবং তার স্ত্রীর নামে একটি ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

“এসব ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ থেকে সন্দেহজনক লেনদেন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটেনের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ) এসব ব্যাংক হিসাব আগেই জব্দ করেছে।”

এর আগে হংকংয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খান এবং লন্ডনে খন্দকার মোশারফ হোসেনের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়, তাহলে তারেক-জোবায়দার অ্যাকাউন্ট কেন জব্দ হবে না, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল খন্দকার মাহবুব হোসেনকে।

জবাবে তিনি বলেন, “ওই খানে স্পেসিফিক মামলা হয়েছে। আদালত একটা আদেশ দিয়েছিল সে আদেশের প্রেক্ষিতে সেটি ফ্রিজ হয়েছিল। এখানে কোনো মামলা মোকদ্দমা নাই। তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা কোনো আদালতে নাই। আদালতে যদি কোনো মামলা পেন্ডিং না থাকে আদালতের এ ধরনের আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার নাই।

“বাংলাদেশের কোনো আদালতের আদেশের উপর নির্ভর করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পারে না, যে পর্যন্ত ওই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন না আসে।”

খন্দকার মাহবুব হোসেনের এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “আইন আদালতকে ক্ষমতা দিয়েছে অনুসন্ধানকালে যদি কোনো তদন্তকারী সংস্থা বা প্রসিকিউশন এজেন্সি জব্দের আবেদন দেয়, আদালত যদি সে আবদনে সন্তুষ্ট হন, তাহলে এ আদেশ আদালত দিতে পারেন।”

বিএনপির আইনজীবীর এ বক্তব্য এক ধরনের ‘ভাওতাবাজি’ মন্তব্য করে দুদক আইনজীবী বলেন, “আদালতের আদেশ বেআইনি হলে উচ্চতর আদালতে আদেশটি চ্যালেঞ্জ করেন। আদালতের আদেশ এভাবে সরাসরি খারিজ করে দেওয়াটা অযাচিত। আমরা দেখে আসছি উনারা এটা করে আসছেন। কিন্তু আদালতের প্রতি সম্মান রেখে কথা বলা উচিৎ।

“তাছাড়া অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার আবেদন তো সরকার করেনি, করেছে দুদক। এটা উনাদের একটা স্ট্যান্টবাজি।”

খুরশীদ আলম খান বলেন, “খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও জোবায়দা রহমান হলেই তাদের অভিযোগের অন্ত নেই। এটা উনাদের কমন প্র্যাকটিস। গত চৌদ্দ বছর এগুলো আমরা দেখে আসছি।

“কথা হল, বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দিতে পারে কি না। আইনেই আছে বিশেষ জজ আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন বা কোনো সংস্থার আবেদনে যদি দেখা যায় সন্তুষ্ট হওয়ার মতো বিষয় আছে তাহলে জব্দের আদেশ দিতে পারেন।”

দুদকের আইনজীবী বলেন, তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে মামলা না থাকলেও বিষয়টি অনুসন্ধানের পর্যায়ে রয়েছে।

“দুদক গত বছর থেকে একটি অনুসন্ধান কাজ করছে রিগার্ডিং ফর সাসস্পেসিয়াস ট্রানজিকশন, জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। একটা পর্যায়ে দেখা গেল, এগুলো জব্দ করা প্রয়োজন, তাই আবেদন করা হয়েছে।”

খুরশীদ আলম খান বলেন, মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স অ্যাক্ট ২০১২ -এর আওতায় এ আবেদন করা হয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন এগেইনস্ট করাপশনে (ইউএনসিএসি) বিশ্বের ১৩৬টি দেশ চুক্তিবদ্ধ, বাংলাদেশ তার অন্যতম সদস্য।

“এখন আদালত যে আদেশটা দিয়েছে সে আদেশ সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর হয়ে ওই ব্যাংকের সিইওর কাছে দাখিল হবে। সিইও যখন আদালতের আদেশ পাবেন তখন উনি এটা ফ্রিজ করে রাখবেন।’

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক অর্থ পাচারের একটি মামলায় দেশের আদালতে দণ্ডিত; এছাড়া একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলা এবং জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার দণ্ড রয়েছে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার এক বছর বাদে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তারেক, তারপর থেকে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে সেখানেই থাকছেন তিনি।