শুক্রবার একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি বলেন, “আমাদের ৬ জন সংসদে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের নির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেবেন না।
“আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের(তারেক রহমান) সঙ্গে বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের স্থায়ী কমিটি নিয়েছে। সুতরাং এখান থেকে ফিরে যাওয়ার বা কেনো পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। আজকে এখানেই এ বিষয়টার নিস্পত্তি হয়ে যাওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।”
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের সঙ্গে জোট বেঁধে- জাতীয় ঐক্রফ্রন্ট গড়ে। কেন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ভরাডুবি হয়।
গত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসন পায় বিএনপি। গণফোরামের দুটি মিলিয়ে ঐক্যফ্রন্ট পায় মোট আটটি আসন।
নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে তারা। নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
কিন্তু গণফোরামের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ায় বিএনপির নির্বাচিতরাও একই পথে হাঁটতে পারেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানান।
সেই আহ্বান নাকচ করে বিএনপি নেতা মওদুদ বলেন, “আজকে তারা আমাদেরকে বলছেন, ‘আসুন আপনারা আসুন’। আমরা তো জানি তাদের নেচারটা কী।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,তার দৃষ্টিতে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনে কেউ জয়লাভ করেনি, কেউ পরাজিতও হয়নি।
“জয়-পরাজয় তো নির্ধারণ করে জনগণ। সেই জনগণ যখন শতভাগ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে নাই, সেই নির্বাচনে নির্বাচিত বলার সুযোগ নাই।”
বিএনপির নির্বাচিতদের মধ্যে কারও সংসদে যাওয়ার আগ্রহ থেকে থাকলে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা শুনি, নির্বাচিতরা বলেন, জনগণের ইচ্ছ। কিন্তু তাদের মধ্যে শুনলাম না এই কথা যে অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিতে আমরা পার্লামেন্টে যাব না।… উঁকি-ঝুঁকি মারছে নানা চোরাগলি পথ দিয়ে নানা কথা। কোন কথা সত্য কোন কথা মিথ্যা জানি না।”
বিএনপির নেতা-কর্মীদের খালেদা জিয়ার মত ‘আপসহীন’ হওয়ার আহ্বান জানান গয়েশ্বর।
নির্বাচনে বিএনপির দুই পরাজিত প্রার্থী মওদুদ ও গয়েশ্বর সংসদে না যাওয়ার বিষয়ে জোরালো বক্তৃতা দিলেও বগুড়ায় খালেদা জিয়ার আসন থেকে নির্বাচিত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে অনুষ্ঠনে কোনো কথা বলেননি।
‘হতাশ হবেন না’
বিএনপিকে ভেঙে ফেলার বহু চেষ্টা হয়েছে অভিযোগ করে দলের মহাসচিব বলেন, “এবারও দেশনেত্রী কারাগারে একটি মাত্র কারণে, বিএনপিকে নিঃশেষ করা, রাজনীতিকে ধ্বংস করা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া।
“আমি বলতে চাই, এটা সম্ভব হবে না, হতে পারে না। কারণ বিএনপি ও দেশনেত্রীর রাজনীতি হল এদেশের মানুষের রাজনীতি।”
খালেদা জিয়া কারাগারে থাকুন, অথবা বাইরে- তার অনুপ্রেরণায়, তার নেতৃত্বেই বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে’ বলে আশা প্রকাশ করেন ফখরুল।
“আমরা জানি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ…. তারপরও এতটুকু মনোবল তিনি হারাননি। এই মনোবল আমাদের মাঝে সঞ্চারিত করতে হবে, তরুণদের মাঝে সঞ্চারিত করতে হবে, যুবকদের মাঝে সঞ্চারিত করতে হবে এবং সেই সঞ্চারণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকে, আমাদের গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে- এটাই হোক আজকের দিনে আমাদের শপথ।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “একটি কার্যকর আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রীকে মুক্ত করা সম্ভব না। সেজন্য সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
খালেদার অন্যতম আইনজীবী মওদুদ আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি। আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা চেষ্টা করে যাব। আদালতের যদি এখতিয়ার থাকত এবং স্বাধীনতা থাকত, অনেক দিন আগেই উনার (খালেদা জিয়া) জামিন হয়ে যেত।
“আজকে তার জামিনটা আমরা এখন পর্যন্ত অর্জন করতে পারি নাই। আপনাদের বুঝতে হবে- রাজনৈতিক কারণে উনি কারাগারে আছেন তুচ্ছ ও ভিত্তিহীন মামলায়, যার কোনো সারবত্তা নাই। আমি বলতে চাই, তার মুক্তির জন্য আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নাই।”
“কেন? এই যে লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা কি ভুলে যাবে? তাদের আত্মীয়-স্বজন-ভাই-বোন-ছেলে-মেয়েরা? কোটি কোটি মানুষ, তারা নীরব থাকতে পারে। কিন্তু বিএনপিকে একেবারে স্থায়ীভাবে মজবুত করে দিয়ে গেল আওয়ামী লীগের এই দুঃশাসন।”
‘খালেদা জিয়া: তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘শত নাগরিক কমিটি’।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও গবেষক আবদুল হাই শিকদারের সম্পাদিত এই বইটি লেখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সেনা বিদ্রোহে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপি হাল ধরতে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। এরপর তার ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক আবদুল হাই শিকদারের লেখা ‘খালেদা জ্যোতির্ময়ী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন কবি নাসিম আহমেদ।
এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, শত নাগরিক কমিটির জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এছাড়া অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, কৃষিবিদ জিকে মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, গৌতম চক্রবর্তী, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, শফিউল বারী বাবু, সেলিম রেজা হাবিব, মীর নেওয়াজ আলী, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নিপুণ রায় চৌধুরী, হাজী ইউসুফ, নুরুল হুদা ভুঁইয়া নুরু, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।