আ. লীগের লোক না হলে এই দুঃসাহস পেত না: মোশাররফ

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িতরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে দাবি করেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2019, 12:22 PM
Updated : 15 April 2019, 12:37 PM

এক দশকের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকার বিএনপির এই নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগের ‘লোক’ না হলে তারা এত বড় দুঃসাহস পেত না।

এভাবে গায়ে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার পথ বিএনপি-জামায়াত জোটের দেখানো বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করার পর পাল্টা তার দলের দিকে এই অভিযোগ তুললেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে এই বক্তব্য দেওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে নুসরাত হত্যা মামলায় সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম আসামি হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তাকে ‘গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না’ বলে খন্দকার মোশাররফ দাবি করলেও গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার মাকসুদকে সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে ফেনীর একটি আদালত।

সোমবার দুপুরে আদালতের ওই আদেশ আসার কিছুক্ষণ পরেই এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “কিছু দিন আগে ঘটে গেল নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড। কারা এটা করেছে? আওয়ামী লীগ। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও স্বীকার করেছে- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জড়িত।

“সেখানকার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যে হত্যাকাণ্ড সারা জাতিকে এত নাড়া দিল সেখানে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আওয়ামী লীগ বলে আজকে তাকে গ্রেপ্তার হয় না।”

নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ এক সময় বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতের নেতা ছিলেন

এই ঘটনাকে ‘ধামাচাপা দেওয়ার’ জন্য সরকারের মন্ত্রীরা নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তি দাবিতে সোনাগাজীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

এই বিএনপি নেতা বলেন, “কারা মিছিল করল এই ধর্ষকদের পক্ষে, এই অত্যাচারীর পক্ষে। আওয়ামী লীগ। আবার উচ্চ স্তরে নানাভাবে কথা বলা হচ্ছে যে, এটা মাদ্রাসায় হয়েছে, এটা বাতিল করে দেওয়া হোক বা মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর কটাক্ষ করা হচ্ছে। এই ঘটনাতো ঘটিয়েছে ব্যক্তি, সেই ব্যক্তি কে? আওয়ামী লীগের লোক। আমি বিশ্বাস করি, সে (ধর্ষক) যদি আওয়ামী লীগ না করত, উলামা লীগ না করত- এই ধরনের নৃশংস কাজ কারও পক্ষে করা সম্ভব হত না।”

তিনি এ দাবি করলেও অধ্যক্ষ সিরাজ এক সময় বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন। ২০১৬ সালে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য রোকনের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করেছিল জামায়াত।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই সরকার এই আওয়ামী লীগ দেশের প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ছেলেদের, যে যুবকদের, যে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগকে নিয়ে এত বড় অপকর্ম করিয়েছে নির্দেশ দিয়ে, তাদের কাছ থেকে কীভাবে আমরা নৈতিক আচরণ আশা করব?”

গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘কবরে’ পাঠিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, এর আগের রাতে করে ফেলেছে। এর আগের নির্বাচন হয় নাই বললেই চলে, মেজরিটি আসনে নির্বাচনই হয়নি। যে কয়টাতে নির্বাচন হয়েছিল সেখানেও দেখা গেছে যে, ৫-১০ ভাগ মানুষও ভোট দিতে যায়নি।”

‘গণতন্ত্র না থাকায়’ দেশে এখন গুম-খুন, হাজার হাজার ‘মিথ্যা মামলা’, ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার থেকে অর্থ লুটের মতো ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“দেশে বিচার বিভাগ আছে, স্বাধীন আছে। কিন্তু কোনো বিচারক স্বাধীনভাবে আজকে বিচার করতে পারে না,” বলেন বিএনপির এই নেতা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলায় বিচারক ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে’ খালাস দেওয়ায় সেই বিচারকের দেশ থেকে পালানোর কথা তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।

খালেদা জিয়ার জামিন নিয়েও ‘টালবাহানা’ চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এক দেশে দুই আইন। সরকারি দলের জন্য আইনের এক রকম প্রয়োগ, আর বিরোধী দলের জন্য অন্য রকম।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ‘আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের’ উদ্যোগে সংগঠনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামিক পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. এজাজ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের ‍মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বক্তব্য রাথেন।