এরপরও কীভাবে উৎসব করব, ইলিশ মাছ খাব: রিজভী

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির নিপীড়ক ও খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2019, 09:11 AM
Updated : 14 April 2019, 09:11 AM

রোববার সকালে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নুসরাতের হত্যাকারীদের বর্বরতার বিবরণ তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “এরপরও আমরা উৎসব করব? এরপরও আমরা ইলিশ মাছ খাব? নতুন কাপড় পরবো? এটা আমরা করতে পারি না।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এই মানববন্ধনের ব্যানারে একপাশে নুসরাত, আর অন্যপাশে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার ছবি ছিল। 

রিজভী বলেন, “জাতীয়তাবাদের প্রতীক দেশনেত্রী আজ কারাগারে। আমাদের আশা ছিল দেশনেত্রীকে নিয়ে পহেলা বৈশাখ করব। আমরা পারিনি। আশা করেছিলাম দেশে শান্তি ফিরে আসবে, আমরা সেটা পারিনি।”

নুসরাতের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়েই’ দেশে এ ধরনের নিপীড়ন নির্যাতন চলছে।

“শত শত নারী-শিশু নির্যাতিত আছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে। সরকার একটা গ্রেপ্তার দেখিয়ে আরেকজনকে রক্ষার চেষ্টা করছে। যারা রক্ষক, প্রশাসন, তারাও সরকারের কথা শোনে। আজকে এমন পরিস্থিতি করেছে যে, কারো বাঁচার ‍উপায় নেই।”

ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলো ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত। সেই মামলায় গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলা প্রত্যাহার না করায় ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মৃত্যু হয় প্রতিবাদী এই তরুণীর।

সাম্প্রতিক সময়ে নারীর ওপর নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “কবিরহাটে একজন নির্যাতিত নারীর খবর শুনতে না শুনতেই ঘটে গেল সূবর্ণচরে। কী পৈশাচিক!

“তারা কারা? তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। কবিরহাটে কারা? তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। তারপর এল ফেনীতে নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসায় পড়েন। ওই শ্লীলনতাহানীর সাথে জড়িত ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তিনি আবার ক্ষমতাসীন দলের সাথে সস্পর্কযুক্ত।”

রিজভী বলেন, “ঘটনার পর তাকে(অধ্যক্ষ) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কত বড় তার সাহস? জেলখানা থেকে সে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বলে দিলেন ওকে (নুসরাত) পুড়িয়ে মারতে হবে। দুই দিনের মাথায় নিস্পাপ ছাত্রীর গোটা শরীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে গেলো। এই বাংলাদেশে আমরা বাস করি! এই বাংলাদেশের আমরা বেঁচে আছি!”

এ ঘটনার জন্য স্থানীয় পুলিশকে দায়ী করে এই বিএনপি নেতা বলেন, অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগী হলে নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারত না।

“সোনাগাজী থানা পুলিশের ওসিও আইনের পদক্ষেপ নিলেন না। বরং নুসরাতের সাথে মিসবিহ্যাব করলেন। তার ভিডিও তুলে সেটি ভাইরাল করে দিলেন। এটা কি হতে পারে? এটা হতে পারে না।”

রিজভী বলেন, “আজকে আপনার সন্তান স্কুলে যাবে, সে অগ্নিদগ্ধ হয়ে না জীবন্ত ফিরে আসবে তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। কেন নেই? এই সরকারের কারণে।

“যে সরকার মধ্যরাতে নির্বাচন করে, যে সরকারের কথায় নির্বাচন কমিশন চলে, যে সরকারের কথায় পুলিশ প্রশাসন চলে, সেই সরকার আইনের সরকার নয়। তার প্রশাসনও আইনের প্রতিপালন করে না।”

এই পরিস্থিতিতে উৎসব করা যায় না মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব  বলেন, “পহেলা বৈশাখ শ্বাশত উৎসব, এটা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতিতে যে সহাবস্থান, সেটা হরণ করেছেন শেখ হাসিনা। আমাদের উসবের প্রাঙ্গণে শান্তি নেই, আছে শুধু ভয় আর আতঙ্ক। এটা আর চলতে পারে না।”  

মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি নুরজাহান ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে এবং জ্যেষ্ঠ সাধারণ সস্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় এ মানববন্ধন হয়।

অন্যদের মধ্যে বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের নেওয়াজ হালিমা আরলি, শাম্মী আখতার, ইয়াসমীন আরা হক, পেয়ারা মোস্তফা, আমেনা খাতুন, মমতাজ বেগম, শামসুন্নাহার বেগম বক্তব্য দেন।