খালেদাকে দেখার পর ফখরুল বললেন, ‘মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা আরও বেড়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারাবন্দি তাদের নেত্রীকে সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2019, 12:44 PM
Updated : 20 March 2019, 12:58 PM

মঙ্গলবার পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় মির্জা ফখরুলের।

খালেদার মুক্তি দাবিতে বুধবার এক প্রতীকী অনশনে ওই সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি বলে বুঝাতে পারব না- আমি এই বেগম খালেদা জিয়াকে কখনো দেখিনি। তিনি এতটা অসুস্থ যে, উনি মাথা সোজা করে বসতে পারছিলেন না। তার সমস্ত শরীরে যন্ত্রণা-ব্যথা, তিনি কোনো কিছু খেতে পারছিলেন না এবং কিছু খেলে সেটা থাকছে না। তাকে (খালেদা জিয়া) সুপরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।”

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দী আছেন খালেদা জিয়া। আর্থ্রাইটিসসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এই মাসেই চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু খালেদা জিয়া আপত্তি জানানোয় তা আর হয়নি। বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান তাদের নেত্রী।

এতদিনেও খালেদা জিয়া মুক্তি না পাওয়ার জন্য সরকারের দিকে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে কোন রাষ্ট্র, কোন সমাজ তৈরি করেছে এরা (বর্তমান সরকার), যেখানে কোনো বিচার নেই, ইনসাফ নেই। কোথাও বিচার পাবেন না। বিচার বলতে সব উঠে গেছে। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত আজকে তথাকথিত দখলদার সরকারের নির্দেশে চলা-ফেরা করে।

“একই মামলায় সব আসামি জামিন পেলেও দেশনেত্রীর জামিন হয় না।”

এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সারা দেশে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আজকে আর বসে থাকবার সুযোগ নেই। এই গণঅনশন ছোট কোনো অনুষ্ঠান নয়, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, বড় আন্দোলন।

এটাকে সামনে নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলায়, প্রতি জেলায় জেলায় বিএনপিসহ সমস্ত অঙ্গসংগঠনকে এই অনশন ছড়িয়ে দিতে হবে।”

খালেদা জিয়া সুস্থ অবস্থায় কারাগারের বাইরে থাকলে তিনি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আন ও বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে’ পরিণত করার জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “সেই নেতৃত্বকে তারা (ক্ষমতাসীন) ভয় পায়।”

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজ এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, আপনারা (সরকার) মানুষের মধ্যে নেই। আপনারা দেউলিয়া হয়ে গেছেন। সে কারণে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে, বন্দুক পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়ে, হাজার হাজার মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আপনাদের ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে।”

“এভাবে ক্ষমতায় কোনো দিন টিকে থাকতে পারবেন না। সময় আছে এখনো বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, যিনি গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারবেন, আপনাদেরও রক্ষা করতে পারবেন। অন্যথায় এদেশের মানুষ অতীতে যেভাবে উঠেছিল, সেভাবে জেগে উঠলে আপনারা সময় পাবেন না।”

প্রতীকী অনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “বর্তমান সরকার প্রধান ভীতসন্ত্রস্ত। বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রাখাটাই একমাত্র তার কাজ নয়, তিনি কখন খবর পাবেন গণভবনে বসে খালেদা জিয়ার জীবনাবসান ঘটেছে, সেই দিন হয়ত স্বস্তি পাবেন, শান্তি পাবেন।

“সেই কারণেই আমার মনে হয়, সরকার পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। খুব সুস্থ মাথায়, স্থির মাথায় তাকে হত্যা করার জন্য আজকে যে নীলনকশা, ওই নীলনকশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ আমাদের করতে হবে এবং তাদের এই ষড়যন্ত্র ধবংস না করা পর্যন্ত খালেদা জিয়া শুধু নয়, বাংলাদেশের মানুষের কারো জীবন নিরাপদ নয়।”

‘অর্ধমৃত দেহ’ নিয়ে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, “আদালত তার প্রতি ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত দেখাতে পারছে না।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে এই গণঅনশন হয়। সকাল ১১টা থেকে ৫ ঘণ্টার এই অনশনের সমাপ্তি টানেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর পরিচালনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু আশরাফ খন্দকার বক্তব্য রাখেন।