রোকেয়া হলে ‘নাটক’ হয়েছে, মামলা হবে: ছাত্রলীগ

ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে রোকেয়া হলে ‘নাটক’ হয়েছে দাবি করে পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2019, 10:50 AM
Updated : 11 March 2019, 12:34 PM

বাম সংগঠনগুলোর প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নূর ও জিএস প্রার্থী রাশেদ খানকে মামলায় আসামি করা হবে বলে ছাত্রলীগ নেতারা জানিয়েছেন।

২৯ বছর পর সোমবার অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ‘ষড়যন্ত্র’ করায় তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিও তুলেছে সরকার সমর্থক সংগঠনটি।

সকাল থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষে বাকি প্রায় সব প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর বিকালে লিটন, নূর ও রাশেদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী রোকেয়া হলের সামনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লিটন, নুর, রাশেদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে, তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।”

পরে মধুর ক্যান্টিনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনেও মামলা দায়ের করবেন বলে জানান ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের জিএস প্রার্থী রাব্বানী।

ট্রাংকভর্তি ব্যালট পেপার নিয়ে উত্তেজনায় তিন ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল রোকেয়া হলে। এই ছাত্রী হলেই সবচেয়ে বেশি ভোটার।

এই হলে ছাত্রলীগ বাদে অন্য প্যানেলের প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ভোটগ্রহণ শুরুর আগে তাদের খালি ব্যালট বাক্স দেখানো হয়নি। আর তিনটি ব্যালট বাক্সের হদিস তারা পাচ্ছিলেন না।

এনিয়ে উত্তেজনার মধ্যে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ২ হাজার ৬০৭টি ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ফারহানা ফেরদৌসী জানান।

রোকেয়া হলে ডাকসুর ভিপি পদে ছাত্রলীগের প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের উপস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী নূরের উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ এসেছে।

সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী দাবি করেন, রোকেয়া হলে নূরের উপর কোনো হামলা হয়নি।

“তারা ছিল ৪০ জন, আমরা ছিলাম ২ জন। খালি ব্যালট পেপার নিয়ে এসেছে সেখানে; সিল ছিল না। যখন নূর ধরা খেয়েছে, তখন অভিনয় করে ফিট হয়ে পড়ে গেল। …এটা নাটক।”

রাব্বানী বলেন, “তারা যে যে অভিযোগ করেছে, তার একটিও প্রমাণ করতে পারেনি। নাটক সুন্দর করে মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে শিক্ষার্থীদের দ্বারা গণপ্রত্যাখ্যানের বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে তারা এখন লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য সেইফ এক্সিট খুঁজছে।”

ছাত্রলীগ সভাপতি ও ডাকসুতে সংগঠনের ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক শোভন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নূর, লিটন নন্দী ও ছাত্রদলের সকলে এক হয়েছে। গতকালই আমরা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, তারা একত্রিত হয়ে এ কাজটি করবে।”

বাম জোট, শিক্ষার্থী অধিকার আন্দোলনের প্রার্থীরা ভোট বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের যে দাবি তুলেছে, তা ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

শোভন বলেন, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর রাখতে ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে।

“ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার স্বার্থে যা করণীয়, আমরা তা করব। কাউকে এস্টাব্লিশ করব না, যার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়, শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়।”

ডাকসু নির্বাচন চলার মধ্যে রোকেয়া হলের একটি কক্ষে ব্যালট পেপার ভর্তি ট্রাংক পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

রোকেয়া হলে ট্রাংকে যে ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে আসল ব্যালটের কোনো মিল নেই বলে দাবি করেন গোলাম রাব্বানী।

“রোকেয়া হলে সাদা কালো অফসেটের যে ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে, তার সাথে অরিজিনাল ব্যালটের কোনো মিল নেই। ক্রস দেওয়া হয়েছে সেটারও কোনো মিল নেই।”

রাব্বানী বলেন, “রোকেয়া হলে ভোটকেন্দ্রের বাইরে অতিরিক্ত ব্যালট পেপারগুলো নিরাপত্তার জন্যই অন্য একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল।”

শোভন বলেন, রোকেয়া হল থেকে ব্যালট ছিনতাই করে নূররা শিক্ষার্থীদের ‘স্বপ্ন ছিনতাই’ করেছে। 

তিনি বলেন, “কুয়েত মৈত্রী হলে যে ব্যালট পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে হলের মূল ব্যালটের কোনো মিল নেই। হলের প্রভোস্টের সিগনেচার এবং সিলের সাথেও কোনো মিল ছিল না।”

ডাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই সোমবার সকালে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। ভোটের চিহ্ন দেওয়া সেই ব্যালট পেপার দেখাচ্ছেন এক শিক্ষার্থী। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

রাব্বানীর দাবি, গোটা বিষয়টিই ‘নূর-লিটনের ষড়যন্ত্রের’ অংশ।

“এটা এক ষড়যন্ত্রের অংশ। নাটক সুন্দর করে মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। আগের রাতে তারা এক হয়েছিল। ছাত্রলীগকে ঠেকানোর জন্য সবাই এক হবে সহজেই অনুমেয়। তারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে।”

ছাত্রলীগের প্রার্থীদের ভোট দেওয়া ওই ব্যালট পেপার উদ্ধারের ঘটনায় কুয়েত মৈত্রী হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এনিয়ে রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো কথা নেই।”

ছাত্রদের ১৩টি হলে ভোটগ্রহণ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই বলে দাবি করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক।

ভোটকেন্দ্রে প্রভাব খাটানোসহ যেসব অভিযোগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এসেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেন সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, ডাকসুতে এজিএস প্রার্থী ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনও অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।