আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভোগা খালেদাকে রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনার সব প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তার আপত্তিতে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দুপুরে এই খবর জানাজানির পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি সমর্থকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার।
তিনি বলেন, “আমার কাছে যে তথ্য আছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। এমনকি হুইল চেয়ারের যে পাদানি থাকে সেখানেও উনি ঠিকমতো পা তুলতে পারেন না। উনার (খালেদা জিয়া) যে ইচ্ছাটা এবং কয়েক দিন আগে কারাগারে উনাকে দেখতে যে বিশেষজ্ঞ টিম গিয়েছিল অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে উনারাও স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, উনাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করতে।
“কারণ উনি ওই হাসপাতালে (ইউনাইটেড হাসপাতাল) চিকিৎসা নিয়ে থাকেন এবং ওখানেই উনার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, যারা সারাজীবন উনাকে চিকিৎসা দিয়েছেন তারা সেখানে আছেন।”
খালেদা জিয়া আসতে না চাওয়ার পেছনে কী যুক্তি দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাকে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, উনি (খালেদা জিয়া) আসবেন না। আমাদের এখানে উনার জন্য প্রস্তত ছিলাম, আমাদের মেডিকেল বোর্ডও প্রস্তুত ছিলেন, কেবিন প্রস্তত ছিল উনার জন্য। উনি আসলে আমরা যথাযথভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।”
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা গত ২৮ ফেব্রয়ারি খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে গিয়েছিলেন জানিয়ে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক বলেন, ওই চিকিৎসকরা তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন। সেই পরীক্ষাগুলো করাতেই উনাকে ‘বিএসএমএমইউতে আসার জন্য বলেছিল বোর্ড’।
তবে খালেদা জিয়ার বিএসএমএমইউ’র ওপর আস্থার সংকট রয়েছে বলে দাবি করেন ড্যাব নেতা ফরহাদ হালিম ডোনার।
তিনি বলেন, “দেশনেত্রী দুই বার এই হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) এসেছিলেন কিন্তু উনি সঠিক চিকিৎসা পান নাই। বিধায় উনি বলতেছেন যে, আমাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হোক। উনাকে কারাগারে দেখতে যে মেডিকেল টিম গিয়েছিল সেই টিমও বাইরে এসে এই কথা বলেছিল যে, উনাকে (খালেদা জিয়া) ইউনাইটেড হাসপাতালে উনার যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে তাদের আন্ডারে চিকিৎসা করানোর জন্য, ওই টিমই প্রস্তাব করেছিল।”
দ্বিতীয় দফায় অক্টোবরে মাসখানেক এই হাসপাতালে রাখার পর কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় ‘চিকিৎসকদের মতামত নেওয়া হয়নি’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খালেদার চাওয়া মতো তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানিয়ে এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে এই ড্যাব নেতা বলেন, “এদেশে অনেকেই আছেন যারা প্যারোলে দেশের বাইরেও গেছেন, এখনো অনেকে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এই হাসপাতাল থেকে কেউ কেউ দেশের বাইরে যাচ্ছেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষের একজন বা একাধিক ডাক্তার থাকে, যার অধীনে তার চিকিৎসা হয়, যে ডাক্তারের ওপর বিশ্বাস থাকে, আস্থা থাকে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওই বিশ্বাসটা আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে যারা বিশেষজ্ঞ আছেন তাদের দ্বারা উনি চিকিৎসা করাতে চান।
“অতএব ওখানে চিকিৎসা করা হলে উনি মানসিকভাবে বেটার ফিল করবেন, শারীরিকভাবেও বেটার ফিল করবেন।”
খালেদা জিয়া কী কী রোগে ভুগছেন জানতে চাইলে ড্যাবের বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমরা দেখেছি যে, উনাকে দুইবার এখানে আনা হয়েছে। রিউমাটোয়েড আর্থ্রাটাইটিসে জয়েন্টগুলো অলরেডি ডিফরমেটিভ হয়ে গেছে, এমন ডিফরমেটিভ যে উনি হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারছেন না।”