বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও এখনও তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।
এই অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও হাসপাতালে ছুটে আসেন।
পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এক ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদেরর সর্বশেষ পরিস্থিতি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
আর মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তার ও পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, পরিস্থিতি মনিটর করছেন। উনি নির্দেশনা দিয়েছেন যেন হাসপাতালে অহেতুক ভিড় করা না হয়।”
দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরে ফজরের নামাজের পর হঠাৎ করেই কাদেরের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকলে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “উনি আসার সঙ্গে সঙ্গে ইসিজি করা হয়েছ। তখন রক্তচাপ স্টেবল ছিল না, আমরা সেটা স্টেবল করেছি।”
এই চিকিৎসক বলেন, এনজিওগ্রামে ওবায়দুল কাদেরের হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি আর্টারি থেকে ব্লক অপসারণ করা হয়।”
“আমাদের এখানেও ভালো চিকিৎসা হয়। হবে উন্নত চিকিৎসার যেহেতু শেষ নেই, সে কারণেই বিদেশে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”
একটি ব্লক অপসারণের পর ওবায়দুল কাদেরের পরিস্থিতি এখন কেমন জানতে চাইলে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান বলেন, “উনি ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে আছেন। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাবে না।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রথমে বলেছিলেন, তাদের সাধারণ সম্পাদককে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত পরিবারেই নেবে।
এর ঘণ্টাখানেক পর দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা উনাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ করছি। আশা করছি তাকে সহসেই সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে পারব।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন কাদের। সেখান থেকেই তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকোলে কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক কাদের প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। মোট চারবার তিনি নোয়াখালী-৫ আসনের ভোটারদের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে এসেছেন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন পর সরকার গঠন করলে ওবায়দুল কাদেরকে যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ন সরকারের সময়ে জরুরি অবস্থার মধ্যে দেশের বহু রাজনীতিবিদের মত ওবায়দুল কাদেরও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। প্রায় ১৮ মাস কারাগারে কাটানোর পর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের দুই মাস আগে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। প্রথমে তাকে তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সরকারের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী।
তখন থেকেই ওই মন্ত্রণালয়ের দেখভাল করছেন ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয়ের নাম সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।