‘ঘুমানোর চক্র’ নিয়ে সতর্ক করলেন আইনমন্ত্রী

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘অনিয়মের অভিযোগ’ নিয়ে ‘গণশুনানি’র নামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বসে বসে ঘুমিয়েছেন মন্তব্য করে তাদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2019, 03:51 PM
Updated : 23 Feb 2019, 03:51 PM

শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই ‘ঘুমানোর চক্র’ একটা জিনিস পারে, সেটা হল ‘ষড়যন্ত্র’।

“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ রকম ষড়যন্ত্র করেই কিন্তু হত্যা করা হয়েছিল। এবং এটাও ঠিক, যারা আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তারা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেও তার বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করেছিল।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘অনিয়মের অভিযোগ’ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘গণশুনানি’ করে।

জোটের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্যানেল সেখানে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকদের অভিযোগ শোনেন।

ওই প্যানেলের সদস্য ছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক বিচারক সা ক ম আনিসুর রহমান খান ও অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ।

‘শুনানি’ শেষে কামাল হোসেন বলেন, “এই নির্বাচনকে (একাদশ সংসদ) নির্বাচন বলা যাবে না। এটা তো নির্বাচন ছিল না, তথাকথিত নির্বাচন। এটা আজকে এই শুনানিতে আমরা বুঝতে পেরেছি- এটা কোনো নির্বাচন হয়নি।”

১৯৯৬ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ‘গণশুনানির’ সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের ‘গণশুনানির’ তুলনা করে আনিসুল হক বলেন, “সেই ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একটি নির্বাচন করেছিল, ভোটারবিহীন নির্বাচন। ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল বলেই এক মাসের মাথায় আন্দোলনের কারণে পদত্যাগ করতে হয়েছিল এবং দেড় মোসের মাথায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যেতে হয়েছিল।”

ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগের পাল্টায় আইনমন্ত্রী বলেন, “উনারা বলেন ২০১৪ সালে নির্বাচন হয় নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর এদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জনগণ তার কাজে উপকৃত হয়েছে। সেই পাঁচ বছর জনগণ আন্দোলন করে নাই। খালেদা জিয়া আন্দোলন করার চেষ্টা করে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। জনগণ কিন্তু তার সাথে সায় দেই নাই।

“আবার উনারা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছেন আমাদের সাথে। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এখন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে শুনানি করছেন। উনারা বলতেছেন, নির্বাচন হয় নাই। এইখানে (ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে) একটাও জনগণ নাই। উনারা ঘুমাইছেন এইখানে বইসা বইসা।

“তারপরও উনারা বলতেছেন গণশুনানি করতেছি। জনগণ তো শেখ হাসিনার সাথে, উনাদের সাথে তো নাই। উনাদের সাথে নাই বলেই এই অডিটোরিয়ামে শুনানি করতে হয়। আর জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন শুনানি করেছিলেন সেই ছিয়ানব্বই সালে, তখন তিনি সহোরাওয়ার্দী উদ্যানে করেছিলেন। এইটাই হচ্ছে পার্থক্য।”

আনিসুল হক বলেন, “যেই দাবি উঠেছে, আমার মনে হয় হয় সেটাও খুব যৌক্তিক দাবি যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের নেপথ্যে কারা ছিলেন তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন দরকার। আজকে তাদের চেহারা উন্মোচিত হচ্ছে আস্তে আস্তে। আমরা ইনশাল্লাহ সেই কমিশনও জনগণকে উপহার দেব, যাতে ইতিহাস ঠিকমত লেখা হয়।”

আইনজীবী সহকারী সমিতির সংবর্ধনা উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বক্তব্য দেন। চার মন্ত্রীই আইনজীবী সহকারীদের জন্য আইন প্রনয়ণের প্রতিশ্রুতি দেন।

বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি মো. মোহাম্মদ নূর মিয়ার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা কোর্ট আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি মো. আবদুল হান্নান, সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম বক্তব্য দেন।