আন্দোলনের স্লোগান শুনে ধৈর্য ধরার পরামর্শ ফখরুলের

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আহ্বানের জবাবে তাদের ধৈর্য ধরতে বললেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2019, 03:17 PM
Updated : 20 Feb 2019, 03:23 PM

ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আলোচনা সভায় ফখরুলের বক্তব্যে দলীয় চেয়ারপারসনের বন্দি থাকার বিষয়টি এলে দর্শক সারিতে থাকা একদল নেতা-কর্মী কর্মসূচি দেওয়ার দাবি তোলেন।

তাদের স্লোগান শুনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কর্মসূচি হবে ধৈর্য ধরেন। কর্মসূচি চাইলেই কি হবে? তা পালন করতে হবে তো। সব কিছু্ হবে, ধৈর্য ধরেন।”

তারপরও হৈ চৈ চলতে থাকলে ফখরুল বলেন, “আপনাদের যে ক্ষোভ-ব্যথা, সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু একটা কথা আপনাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যখন গণতান্ত্রিক শক্তি লড়াই করে, অত সহজে সফলতা অর্জন করা যায় না।”

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ড নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বছরের বেশি সময় কারাগারে রয়েছেন। দণ্ডের কারণে তাকে বাদ রেখেই এবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছিল বিএনপিকে।

খালেদা জিয়াকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলায় দণ্ড দিয়ে বন্দি করা হয়েছে বলে বিএনপির দাবি; সেই সঙ্গে দলটির নেতারা বলছেন, আইনি পথে তার মুক্তি পাওয়াও আটকে রেখে সরকার।

বুধবারের আলোচনা অনুষ্ঠানে খালেদার অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আন্দোলন ছাড়া দলীয় নেত্রীর মুক্তির কোনো পথ আর দেখছেন না তিনি।

“আন্দোলন ছাড়া আমাদের প্রিয় নেত্রীর মুক্তি সম্ভবপর নয়। সেজন্য এবার আমাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে কর্মসূচি নিতে হবে। যাতে করে এবার আমরা পরাজিত না হই।”

আন্দোলনের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মওদুদ বলেন, “আমাদের বিশাল জনপ্রিয়তা। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা যথেষ্ট নয়।

“এই নির্বাচনের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সংগঠন ছাড়া জনপ্রিয়তা কখনোই কাজে লাগানো সম্ভবপর নয়। সেজন্য এই দলকে নতুন করে পুনর্গঠন করতে হবে।”

এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তরুণ এবং দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারীদের দায়িত্বে আনার পরামর্শ দেন মওদুদ।

“যারা তরুণ-নবীন তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে, সর্বপর্যায়ে যারা ত্যাগ স্বাকীর করেছেন, যারা মার খেয়েছেন, যারা হাসপাতালে গিয়েছেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের বাড়ি-ঘর পুড়েছে, তাদের উপযুক্ত সম্মান দেখিয়ে তাদের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে করতে হবে। তাহলেই সংগঠন হবে শক্তিশালী সংগঠন এবং যে কোনো অবস্থা মোকাবেলা করার ক্ষমতা সেই সংগঠনের থাকবে।”

নেতা-কর্মীদের সান্ত্বনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আপনারা কেন বার বার ভাবছেন যে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা ব্যর্থ হন নাই, পরাজিত হন নাই। আপনারা বিজয়ী হয়েছেন।

“আপনারা আজকে আওয়ামী লীগকে জনগণের সামনে, বিশ্বের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এরা একটা ফ্যাসিবাদী শক্তি, গণতন্ত্রের কথা মুখেই বলে, এরা কোনোদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে নাই।

“এরা পঁচাত্তর সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ভুলে গেলে চলবে না দীর্ঘ ১০/১২ বছর ধরে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্যই একের পর এক নির্যাতন চালাচ্ছে, নিপীড়ন চালাচ্ছে, নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে।”

তিনি বলেন, “এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করবার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সংগঠনকে অত্যন্ত শক্তিশালী করতে হবে এবং সংগ্রামী করে তৈরি করতে হবে।

“এই লড়াইকে আমাদের আরও সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা নিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কখনোই মনের জোরকে হারিয়ে ফেলবেন না, হতাশায় নিমজ্জিত হবেন না। অন্ধকার থেকে সূর্যোদয় হবেই।

“দেশনেত্রী কারাগারে আছেন, তিনি একবারের জন্যও আমাদেরকে মনোবল হারানোর কথা বলেন নাই। বার বার বলে যাচ্ছেন- তোমরা সংগ্রাম করো, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম কর।”

খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, খায়রুল কবির খোকন, হেলেন জেরিন খান, আবদুল কাদের ভুঁইয়া, আকরামুল হাসান।